পরশুরামে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। এতে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। কোথাও বসতঘর, আঞ্চলিক মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক, কাঁচা রাস্তা, আবার কোথাও কালভার্ট ভেঙে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। এছাড়া বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, ঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতিও নজরে পড়ছে।
উলেস্নখ্য, পরশুরামে গত ১ ও ২ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ৩৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে এতে প্রায় উপজেলা প্রশাসনের হিসাব মতে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর আগে ১ জুলাই মুহুরী নদীর পাঁচটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত হয়েছিল।
এ সব এলাকার ফসলি জমি, পুকুরের মাছ, রাস্তা, বসতঘর, সবজিক্ষেত ডুবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়াও অন্তত বিশটি বসত ঘর বন্যার পানিতে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
রোববার সকাল থেকে উপজেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পানি কিছুটা নেমে গেলেও ফেনী-পরশুরাম সড়ক হাঁটু পরিমাণ পানি থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ৩৫ গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে।
উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পাঁচটি, চিথলিয়া ইউনিয়নের ২টি বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে তিনটি পৌরসভা দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা এলজিডি, কৃষি অফিস, মৎস্য অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে উপজেলার সড়কের প্রায় দেড়শ' কিলোমিটার পাকা রাস্তা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ মুস্তাফা জামান বলেন, উপজেলার প্রায় ৮৮০ পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষিদের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী পিন্টু কুমার দাস বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উপজেলার পায় ১ হাজার ২৪০ হেক্টর রোপা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও ৭৮ হেক্টর বীজ তলা, ১৫ হেক্টর সবজি, দশ সেক্টর আউশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরশুরাম উপজেলা প্রকৌশলী এসএম শাহ আলম ভুঁইয়া বলেন, উপজেলায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নতুন সড়ক রয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, উপজেলার ১২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে উপজেলা থেকে মির্জানগর ইউনিয়ন সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় ১২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম সাহসিকতা ও ধৈর্যের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য উপজেলাবাসীকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন শিগগিরই একনেকে অনুমোদিত হলে এই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী সমাধান হবে।