আকস্মিকভাবে পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ

কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক হুমকির মুখে

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীর ভাঙন -যাযাদি
আকস্মিকভাবে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ভেঙে পড়ছে নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ ইটভাটা। ভাঙনে কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী জনপদ টিকিয়ে রাখতে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আতঙ্কিত এলাকাবাসী। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পের কারণে ভেড়ামারায় দিনদিন ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন। পদ্মার তীব্র স্রোতে দিনদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। ফলে ভেড়ামারা উপজেলার কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক ও রায়টা বেড়িবাঁধ এখন হুমকির মুখে। রায়টা বেড়িবাঁধ ভাঙন থেকে মাত্র ২শ' মিটার দূরে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার পরিবারের বাড়িঘর। বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা বেড়িবাঁধের পাশেই অন্যতম দর্শনীয় স্থান রায়টা পাথর ঘাট। এখানে রয়েছে পিকনিক স্পট। উপজেলার ফয়জুলস্নাহপুরে ১ কিলোমিটার, মসলেমপুরের দুটি পয়েন্টে ৬শ' মিটার ও ৪শ' মিটার এলাকায় পদ্মা নদীর ডানতীরে ভাঙন হচ্ছে। এসব পয়েন্টে নদীতে ভেঙে পড়ছে কৃষকের আবাদি জমি। প্রতিদিন পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাঁধের কাছে এসে পানির ধাক্কা লাগছে। পানির স্রোতে ঘুরপাক ও পানির তীব্রতায় রায়টা বেড়িবাঁধ ভাঙতে শুরু করেছ। এই বাঁধ ভেঙে গেলে রায়টা নতুনপাড়া, ফয়জুলস্নাপুর এই দুইটি গ্রাম আগে পানিতে ডুবে যাবে। পানিবন্দি হয়ে পড়বে প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি। পদ্মায় পানি তুলনামূলক কম হলেও বন্যার পানি আসা শুরু করেছে। অপরদিকে ভেড়ামারার ১২ মাইল টিকটিকি পাড়ার সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ' একর ফসলি জমি। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণেই পদ্মায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। যা দেখে স্থানীয় মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। ভেড়ামারার মসলেমপুর ও ১২ মাইল এলাকায় আবারও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক একর ফসলিজমি। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পের কারণে ভেড়ামারায় দিনদিন ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে তালবাড়িয়ায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। বর্ষার পরেই শুরু হবে কাজ। পরের মৌসুম থেকে নদীর ডানতীরে আর ভাঙন হবে না। দ্রম্নত ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভাঙনরোধে জরুরিভাবে বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হবে। ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। দ্রম্নতই জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। ভেড়ামারার মসলেমপুর এলাকায় ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড পশ্চিমাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজসহ পানি প্রকৌশলীরা। নদীতীরে ব্যবসায়ীদের জড়ো করে রাখা বালুর স্তূপ ভাঙন তীব্র করছে বলে জানান তারা। ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, 'এখন যে ভাঙন দেখা দিয়েছে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের উদ্যোগ রয়েছে দু-একদিনের মধ্যেই ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হবে। পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য নিয়মিত আভিযান চলবে।' এলাকাবাসী সালাম হোসেন বলেন, ভেড়ামারা ১২ মাইল মসলেমপুর এলাকায় পদ্মায় বৈধ বালুমহাল না থাকলেও প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছেন। এর ফলে পানির গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে এসব এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইটভাটা, মসজিদ, হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাট। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পের কারণে ভেড়ামারায় দিনদিন ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, প্রতি বছর পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রায়টা বেড়িবাঁধে পানির আঘাত হানে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এলাকার মানুষ। এবারও তাই হয়েছে। দ্রম্নত পদক্ষেপ না নিলে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক গ্রাম ডুবে যাবে। ভেড়ামারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসাইন বলেন, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও নৌপুলিশের সমন্বয়ে পদ্মা নদীতে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।