কিশোরগঞ্জে ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য হাওড়

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

মন্তোষ চক্রবর্তী (হাওড়াঞ্চল)
পর্যটকশূন্য কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের হাওড় পাড়ের অলওয়েদার সড়ক -যাযাদি
এখন হাওড়ের ভরা যৌবন। বর্ষা আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওড় উত্তাল। যতদূর চোখ যায় শুধু অথৈ পানির ধারা। তবে কিশোরগঞ্জের হাওড়সংলগ্ন ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের অলওয়েদার সড়কে পর্যটকের খুব দেখা মিলছে না। অন্যান্য বছর এ সময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের দেখা মিলত অলওয়েদার সড়ককে ঘিরে। কিন্তু এবার হাওড়ের পুরো দৃশ্যপটই পাল্টে গিয়েছে। জেলার চিরচেনা হাওড়গুলো এখন পর্যটকশূন্য। সড়কে বসে অলস সময় পার করছে অটোরিকশা চালকরা। অন্যদিকে হাওড়পাড়ের খুব একটা দেখা মিলছে না পর্যটকবাহী নৌকারও। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও মানুষশূন্য। বিগত কয়েক দিন আগেও ছিল এই সড়কে পর্যটকদের ঢল। বর্তমানে এই পর্যটন এলাকায় অনেকটাই সুনসান নীরবতা। বিশেষ করে সরকারি বন্ধের দিন বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেই একই অবস্থা। লাগাতার কারফিউ আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এমন পরিস্থিতির হয়েছে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। যদিও হাওড়ে এই আন্দোলনে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি বলে একাধিক স্থানীয়দের ভাষ্য। হাওড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ স্পিডবোট আর নৌকা। কিন্তু সেই স্পিডবোটগুলোতেই পর্যটকদের তেমন দেখা যাচ্ছে না। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সারাদেশে সহিংসতায় বর্ষার ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে হাওড় এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন হাওরকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া নৌকা ও স্পিডবোটের মালিক-কর্মচারীসহ অটোরিকশা চালককরা। হাওড়গুলোতে বছরের ছয় মাস পানি থাকে, আর বাকি সময়টা থাকে শুকনা। স্থানীয়রা বলেন, বর্ষায় হাওড়ে বিশাল জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। হাওড়জুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা হিজলগাছ আর পানির নিচ থেকে জেগে ওঠা করচের বন। ভ্রমণপিপাসুদের মনে এনে দেয় এক অপরূপ অনুভূতি। আর এই জন্য বর্ষাকে বলা হয় হাওড়ের যৌবন। অষ্টগ্রামের এক নৌকা মালিক মাতু মিয়া বলেন, 'এই আন্দেলনের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে ঘরে বসে আছি। এমনও দিন গেছে পর্যটকদের নিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার বাজিতপুর দিয়ে এসেছি, কিন্তু গত কদিন ধরে বসে থেকে অনেকটা কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি।' অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট চটপটির দোকানি আক্তার হোসেন জানান, এই চটপটির দোকান দিয়ে সংসার চলে। প্রতিদিন আটশ থেকে এক হাজার টাকা বিক্রি হতো এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা বিক্রি করা যেত কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে তেমন বেচাকেনা হয় না।' অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্টে অবস্থিত হাওরভোজ রেস্টুরেন্টের মালিক শামসুল আলম শামীম বলেন, বর্তমানে পর্যটন হাওড়ে একেবারে কম থাকার রেস্টুরেন্টে বেচাকেনাও অনেক কমে গেছে। এমনিতে প্রতিদিন ৪০-৪৫ হাজার, বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন কখনো লাখের ওপরে বিক্রি করা যেত কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে রেস্টুরেন্টের কর্মচারীর বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।