ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাইশখালী জমিদারবাড়ি

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

আবু নাসের হুসাইন, সালথা (ফরিদপুর)
ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বলস্নভদি ইউনিয়নের বাইশখালী জমিদার বাড়ি। বাইশখালী বাজারের পাশেই অবস্থিত দুইশ' বছরের অধিক পুরানো এই জমিদার বাড়ি। যা আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জমিদার বাড়িতে রয়েছে চুন-সুরকি, ইট, লোহা ও কাঠ দ্বারা তৈরি দৃষ্টিনন্দন একটি মন্দির, তিন তলাবিশিষ্ট পুরাতন ২টি ভবন। এখন শুধু সুনসান নীরবতা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। জানা যায়, বাইশখালী জমিদার বাড়িতে ১৭৬০ সাল থেকে বসবাস সিংহ পরিবারের। তবে শুরু থেকে জমিদারদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে এই সিংহ পরিবারে জন্ম নেন যতীন্দ্রনাথ সিংহ রায় বাহাদুর। তিনি ত্রিশ বৎসর বঙ্গীয় সিভিল সার্ভিসে প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পরবর্তীতে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসরের পর তিনি সাহিত্য চর্চা করতেন এবং তার রচিত অসংখ্য গ্রন্থ ছিল বলে জানা যায়। ফরিদপুরের এক অংশে তিনি জমিদারি করতেন। যতীন্দ্রনাথ সিংহ ও তার স্ত্রী সরোজিনী সিংহ আমৃতু্য তাদের বাইশখালী জমিদার বাড়ি এবং ফরিদপুর শহরে বসবাস করেছেন। মৃতু্যর পরে তাদের সমাধী বাইশখালী বা ফরিদপুরের কোথায় কীভাবে হয়েছে জানা যায়নি। যতীন্দ্রনাথ সিংহের একমাত্র ছেলে সুরেন্দ্রনাথ সিংহ তৎকালীন সময়ে ডাক্তারি পাস করে কিছুদিন ফরিদপুর শহরে চিকিৎসায় কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারপর ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্ব-পরিবারে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। তার চার ছেলের মধ্যে সত্যজিৎ সিংহ (বৈদ্যনাথ বাবু) ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তার স্ত্রী শ্রীমতি রেখা রানী সিংহকে নিয়ে কলকাতা থেকে ফের বাংলাদেশে এসে বাইশখালী সিংহবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। মানুষের সেবাই ছিল তাদের কাজ। হাট-বাজার, স্কুল ও চিকিৎসা সেবার জন্য প্রচুর জমি দান করেছেন সত্যজিৎ সিংহ। সত্যজিৎ সিংহ ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ডিসেম্বর বাইশখালীর নিজ বাড়িতে দেহত্যাগ করেন। তার স্ত্রী রেখা রানী সিংহ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর দেহত্যাগ করেন। স্বামী-স্ত্রী দু'জনকেই সিংহবাড়ি সংলগ্ন দুর্গা মন্দিরের পার্শ্বে সমাহিত করা হয়। সিংহ বংশের কেউ কেউ ভারতে বসবাসরত আছেন কিন্তু বাংলাদেশে সিংহ বংশের কেউ আর অবশিষ্ট নেই। তাই সত্যজিৎ সিংহের মৃতু্যর পর তার স্ত্রী রেখা রানী সিংহ বাইশখালী সিংহবাড়ি ও তৎ সংলগ্ন ঠাকুর দালান রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য রাধা গোবিন্দের নামে তাদের সমুদয় সম্পত্তি দিয়ে যান। স্থানীয়রা জানান, বাইশখালী জমিদার বাড়িতে সব সময় ছিল মানুষের বিচরণ। ছিল না কোনো কিছুর অভাব। সোনা, রুপার অলংকার, পাথরের মূর্তি, খাট-পালঙ্কসহ ছিল অসংখ্য তামা-কাসার ব্যবহারিক জিনিস। এখন কিছুই নেই, নীরবে দাঁড়িয়ে আছে শুধুই স্মৃতি বিজড়িত চুন-সুরকি ও কাঠ দ্বারা তৈরি জীর্ণ ভবন। এই ইতিহাস ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ভবনগুলো সংস্কার করার দাবি জানান স্থানীয়রা। রাধা গোবিন্দ ট্রাস্টের ট্রাস্টি প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, সত্যজিৎ সিংহ বেঁচে থাকতেই রাধা গোবিন্দ ট্রাস্টের নামে সহায় সম্পত্তি দিতে চেয়েছিলেন। জমি দেওয়ার আগেই সত্যজিৎ সিংহ দেহ ত্যাগ করেন। এরপর তার স্ত্রী রেখা রানী সিংহ ২০১৪ সালে সমস্ত সম্পত্তি রাধা গোবিন্দ ট্রাস্টের নামে দিয়ে যান। এর আট বছর পর গত দুই বছর ধরে আমি এই বাড়িটি দেখাশোনা করি। এখন বাড়িটি সংস্কার খুব প্রয়োজন। বলস্নভদি ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহীন বলেন, জমিদার বাড়ির সত্যজিৎ সিংহ ও তার স্ত্রী রেখা রানী সিংহ মারা যাওয়ার পর কেউ এখানে আর থাকেন না। এখন শুধু স্মৃতি হিসেবে বাড়িটি রয়েছে। এই বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য সংস্কার করা দরকার।