বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) কর্তৃক বিইউ সয়াবিন-৫ নামে সম্প্রতি সয়াবিনের একটি জলাবদ্ধতা সহনশীল, স্বল্পজীবনকাল ও দেশের সবচেয়ে বড় দানাবিশিষ্ট উচ্চফলনশীল সয়াবিনের একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতে করে সাইক্লোন ও বন্যাকবলিত এলাকায় কম সময়ে এ জাতের সয়াবিন সংগ্রহ করতে পারে। জাতটি ৭ দিন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে।
জাতটির উদ্ভাবক বশেমুরকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল করিম জানান, তাইওয়ানের অংরধহ ঠবমবঃধনষব জবংবধৎপয ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঈবহঃবৎ (অঠজউঈ/ ডড়ৎষফ ঠবমবঃধনষব ঈবহঃবৎ), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং দেশের নোয়াখালী ও লক্ষ্ণীপুর এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জার্মপস্নাজম সংগ্রহ করে ২০০৬ সাল থেকেই বিভিন্ন আঙ্গিকে সয়াবিন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বশেমুরকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। এ পর্যন্ত সয়াবিন উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ছয়জন পিএইচডি ও ১৮ জন ছাত্র-ছাত্রী এমএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায়শই সয়াবিনের পরিপক্বতার প্রারম্ভেই সাইক্লোনের জন্য আকস্মিক অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়। ফলে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং সয়াবিনের ক্ষতি করে। সে জন্যই উপকূলীয় অঞ্চলের সয়াবিন চাষিদের দীর্ঘদিন ধরে স্বল্পজীবনকাল ও জলাবদ্ধতা সহনশীল জাতের চাহিদা ছিল। সে লক্ষ্যেই বশেমুরকৃবিতে এ বিষয়ে নিবিড় গবেষণা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অঠজউঈ থেকে সংগৃহীত ইউ২৩৩৪ জার্মপস্নাজমটি উচ্চফলনের পাশাপাশি সাতদিন ধরে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে।
জাতটি উদ্ভাবন টিমের প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল করিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে কৃষক পর্যায়ে এর সঠিকতা যাচাই করার জন্য নোয়াখালী ও লক্ষ্ণীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির মাঠ পর্যায়ে রবি ও খরিফ দুই মৌসুমেই চাষ করা হয়। দীর্ঘমেয়াদি এ গবেষণায় আর্থিক সহযোগিতা করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বশেমুরকৃবির গবেষণা উইং। সহযোগিতা করেছে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট কৃষক ও গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে ইউ২৩৩৪ জার্মপস্নাজমটি সম্প্রতি বিইউ সয়াবিন-৫ নামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগে নিবন্ধন তথা অনুমোদন পেয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির ফলন পাওয়া গিয়েছে ৩.৫ মে. টন। দেশের অন্যান্য জাতের জীবনকাল যেখানে ১০০-১১০ দিন সেখানে বিইউ সয়াবিন-৫ মৌসুমভেদে ৭৫-৮৫ দিনেই পরিপক্ব হয়। ফলে সয়াবিনের ফল পাকার প্রাক্কালে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আকস্মিক জলাবদ্ধতা থেকে জাতটি রক্ষা পাবে। বিইউ সয়াবিন-৫ এর ১০০০ বীজের ওজন ২৮৫ গ্রাম, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান যে কোনো জাতের চেয়ে বেশি। জাতটির প্রোটিনের পরিমান ৩৮% এবং তেল ২০%।