ইচ্ছে পূরণের আগেই নিভে গেল জীবনপ্রদীপ
স্ত্রীকে বিয়েবার্ষিকী পালনের কথা দিয়ে রাখতে পারেননি মেরাজুল
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা
প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আবেদুল হাফিজ, রংপুর
স্ত্রী নাজমীম ইসলামকে কথা দিয়েছিলেন মহাজনের টাকা পরিশোধ করে বাসায় ফিরে পরিবারকে নিয়ে বিয়েবাষির্কী পালন করবেন পাকা কলা খুচরা বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম (৩৬)। প্রতিক্ষায় ছিলেন স্ত্রী। ইচ্ছে পূরণ হওয়ার আগেই গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে তার স্বামীর।
গত ১৯ জুলাই বিকালে রংপুর নগরীর প্রধান সড়কের জরজেট মার্কেটের সামনে আকস্মিক কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলননের কমপিস্নট শাটডাউন ও বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মা তার সন্তানের ও স্ত্রী তার স্বামীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে সব আনন্দ অপেক্ষা থমকে যায়।
রংপুর নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ জুম্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত সামছুল হকের ছেলে মেরাজুল ইসলামের (৩৬)। সেখানে তারা একটি টিনের চালাতে কষ্টে জীবনযাপন করছেন। ৫ ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ২০ বছর আগে তার বাবা মারা গেলে কিশোর বয়সেই টানাপড়েন সংসারের হাল ধরেন তিনি। ১৫ বছর আগে বিয়ে করেন প্রতিবেশী নাজমীম খাতুনকে। এখন তার দুই সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে নাজিম হোসেন (১৫) ভোকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ও ছোট ছেলে তিন বছরের মোহাম্মদ হানিফ। ৪ বছর ধরে তিনি ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ পাকা কলার ব্যবসা করছিলেন। এর আগে তিনি পান-সিগারেটের দোকান করতেন। সংসারের আয়-রোজগারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তিনি। তাকে হারিয়ে চোখে-মুখে শুধুই অন্ধকার দেখছে তার পরিবার।
জানা গেছে, ১৯ জুলাই রংপুর নগরী ছিল সকাল থেকে স্বাভাবিক। বিকাল সাড়ে ৩টার পর থেকে নগরী উত্তপ্ত হতে থাকে। এর আগের দিন কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের কমপিস্নট শাটডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে নগরীতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ অফিস, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি ও মহানগর ডিবি অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ সংঘটিত হয়েছিল।
নিহতের স্ত্রী জানান, ঘটনার দিন সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হন মেরাজুল। জুমার নামাজ বাইরের মসজিদে পড়ে দুপুর আড়াইটার দিকে বাজারসওদা করে বাসায় ফেরেন তিনি। বিকাল ৩টার দিকে আবার বের হন। সে সময় তিনি স্ত্রীকে বলে যান, মহাজনের টাকা পরিশোধ করে বাসায় ফিরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিয়েবার্ষিকী পালন করবেন। আছরের আজানের সময় পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন মেরাজুল গুলিবিদ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রয়েছেন। ছুটে যান তারা। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেরাজুলকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করা অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃতু্য হয়।
পারিবারের সদস্যরা জানান, মেরাজুলের মৃতু্যর পর তারা এখন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। এখন পর্যন্ত আর্থিক সুযোগ সুবিধা না পেয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভরণপোষণের দায়িত্ব চান।