টানা চার দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে নাইক্ষ্যংছড়ি খালের বেইলি ব্রিজটি। এতে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী, দোছড়ি ইউনিয়নসহ রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ।
বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম কোম্পানি বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি খালের বেইলি ব্রিজটি বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমাদের উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রায়।
অন্যদিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রম্ন খালের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে ইমরান নামের দশ বছরের ৫ম শ্রেণির এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও শতাধিক কাঁচা বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২ শতাধিক পরিবার। স্থান ভেদে দেখা মিলেছে পাহাড়ধস। বিশেষ করে গত বুধবার অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতির মুখে পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ে ও নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমকূল, ক্যাম্প পাড়া, ঘোনার পাড়া, হিন্দু পাড়া, বাজার পাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কোনার পাড়া, মধ্যম পাড়াসহ ৫ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় খাবার সংকট। এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সড়কে পাহাড়ধসের সঙ্গে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ায় এবং রাস্তার ওপর ঢালের পানি প্রবাহিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ধসে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে তুমব্রম্ন পশ্চিমকূল গলাছিড়া নামক স্থানের পাহাড়ের ওপর বসবাসরত ৫-৬টি পরিবার।
সেখানকার বাসিন্দা নুরুল কবির বলেন, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে পাহাড়ের একটি অংশ ধসে রাস্তার ওপরে পড়ে এবং ২য় ধাপে বাড়ির বারান্দা বরাবরই সকালের দিকে পাহাড়ধসে পড়াতে খুব বেশি আতঙ্কে দিন কাটছে।
দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদুল হক বলেন, রাস্তা প্রশস্ত করা কালে পাহাড় থেকে মাটি নেওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে যদি টেকসই গাইডওয়াল দেওয়া হয় পরবর্তী বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া, রাস্তা, দোকান পস্নাবিত হয়েছে। পাশাপাশি অনেক স্থানে পাহাড়ধসে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ফাইচং মারমা জানান, টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটিগুলো নরম হওয়ায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে আমরা এখন আতঙ্কিত।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ জানান, এমপির মাধ্যমে ব্রিজটি পুনঃসংস্কারের আবেদন করা হয়েছে। আর পাহাড়ে বসবাসরত সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। পাহাড়ধস ও পানিবন্দি স্থানগুলো তিনি পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের আপাতত শুকনো খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, পরবর্তীতে সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, রামু উপজেলার গর্জনিয়ার মাঝিরকাটা, বড় বিল, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাজিরপাড়া, ফাক্রির কাটা, চাকমার কাটা বড় জাংছড়িসহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। রামু উপজেলার চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো জানান, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের এলাকার খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে। আর উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ইউএনও মো. জাকারিয়া বলেন, পানিবন্দি মানুষের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণকে সতর্ক করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে। পানি কমলে ব্রিজ সচল করা হবে। তাছাড়া নিখোঁজ শিশুটির উদ্ধারে তৎপরতা চলছে।
এ রিপোর্ট লেখা ও পাঠানো পর্যন্ত থেমে থেমে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।