বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

তথ্য আইনে সওজ'র তথ্য চাওয়ায় অফিসে ডেকে সাংবাদিককে হেনস্তা

শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা প্রতিনিধি
  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
তথ্য আইনে সওজ'র তথ্য চাওয়ায় অফিসে ডেকে সাংবাদিককে হেনস্তা

শরীয়তপুরে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ায় অফিসে ডেকে নিয়ে এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পদ্মা সেতুর এপ্রোচ সড়ক ও শেখ হাসিনা সড়ক থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত অধিগ্রহণকৃত ঘরবাড়িসহ স্থাপনার নিলাম-সংক্রান্ত তথ্য চাওয়ায় শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অফিসে ডেকে নিয়ে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন ওই অফিসের দুই কর্মচারীসহ স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার। বিষয়টি নিয়ে থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।

গত মঙ্গলবার শরীয়তপুরের পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর শহরের প্রেমতলা থেকে পদ্মা সেতুর এপ্রোচ সড়ক ও শেখ হাসিনা সড়ক (মনোহর মোড়) থেকে ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কের দুই প্রান্তের অধিগ্রহণকৃত ঘরবাড়িসহ স্থাপনার নিলাম-সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গত ১ জুলাই তথ্য অধিকার আইনে তথ্যপ্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন বাংলাদেশ সমাচারের প্রতিনিধি রুহুল আমিন জুয়েল রানা নামে এক সাংবাদিক। এরপর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেই-দিচ্ছি বলে গড়িমসি করতে থাকেন। সর্বশেষ গত সোমবার দুপুরে নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইলে কল করা হলে তিনি তথ্য নেওয়ার জন্য সড়ক বিভাগের অফিস সহায়ক গোলাম মাওলার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর কথা অনুযায়ী সড়ক বিভাগে যান তথ্যপ্রাপ্তির আবেদনকারী সাংবাদিক রুহুল আমিন জুয়েল রানাসহ তার সহকর্মী ঢাকা পোস্টের শরীয়তপুর প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ।

এ সময় অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা তার কক্ষ থেকে জুয়েল রানাকে নিয়ে বের হয়ে অন্য একটি জায়গায় জোরপূর্বক বসিয়ে রাখেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে সড়ক বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তার ও অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা, স্থানীয় ঠিকাদার সরোয়ার তালুকদার এবং রাব্বিসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন অফিস সহায়কের কক্ষে এসে সাইফ রুদাদকে অ কথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেই সঙ্গে তথ্য না দিয়ে লাঞ্ছিত করে অফিসকক্ষ থেকে বের করে দেন।

এ সময় তারা আবার সাইফ রুদাদকে অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে পুনরায় তথ্য চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এরপর ওইদিন (সোমবার) রাতেই সাইফ রুদাদ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

লাঞ্ছনার শিকার সাংবাদিক জুয়েল রানা বলেন, 'অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা তথ্য দেবেন বলে আমাকে অন্য একটি রুমের সামনে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে জোরপূর্বক বসিয়ে রাখেন। এরপর গোলাম মাওলা, সালমা, সরোয়ার ও রাব্বিসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত অফিস সহায়কের কক্ষে ঢুকে সাইফ রুদাদকে লাঞ্ছিত করে আমাদের দুইজনকেই প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বের করে দেন। ঘটনার প্রমাণাদি সড়ক বিভাগের অফিসের সিসি ক্যামেরা চেক করলেই পাওয়া যাবে। এ ঘটনায় সাইফ রুদাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।'

ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাইফ রুদাদ বলেন, জুয়েল রানার অনুরোধে সড়ক বিভাগে গিয়েছিলাম। অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা তথ্য দেবেন বলে জুয়েল রানাকে অন্যত্র ডেকে নিয়ে যান। আমি অফিস সহায়কের কক্ষে বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করেই অফিস সহায়ক গোলাম মাওলা, কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তার, ঠিকাদার সরোয়ার ও রাব্বিসহ বেশ কয়েকজন আমার ওপর চড়াও হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কক্ষ থেকে বের দেন। বারবার বলার চেষ্টা করছিলাম, আমি জুয়েল রানা নই, কিন্তু তারা আমার কোনো কথাই শোনেনি। আমি এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার সহকর্মী জুয়েল রানাসহ আমার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমি এই ঘটনার বিচার দাবি করছি।'

পালং মডেল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সাংবাদিককে হুমকি-ধামকির অভিযোগ তুলে এক সাংবাদিক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আদালত থেকে জিডি তদন্তের আদেশ পাওয়া মাত্রই আমরা তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।'

সড়ক ও জনপথ বিভাগ শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, 'অফিসের মধ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে অপ্রীতিকর একটি ঘটনা ঘটেছে। আমি অফিসে ছিলাম না। ঠিকাদার সরোয়ারকে সড়ক বিভাগে আসতে নিষেধ করেছি। সালমাকে সতর্ক করে দিয়েছি। ওই সাংবাদিককে আজকের মধ্যে তথ্য দিয়ে দেব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে