দেশের উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি ও কারফিউর কারণে নওগাঁর সাপাহারে গত কয়েক দিনে আমচাষি এবং ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫' থেকে ৬শ' কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে নওগাঁর সর্ববৃহত আমের বাজার সাপাহার হতে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর প্রকৃতিগতভাবে আমের বিপর্যয় হলেও বাজারের শুরুতেই দাম ভালো ছিল। তাই এখানকার আমচাষিরা তাদের লাভ ক্ষতি কিছুটা হলেও পুশিয়ে নেওয়ার আশা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে দেশে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দেশে কারফিউ জারি করে। এতে পণ্যবাহী পরিবহণের আওতামুক্ত থাকলেও দেশের বৃহৎ এই আমবাজারে ব্যাপারিরা গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার অজুহাতে বেশ কয়েকদিন আম কেনা বেচা হতে মুখ ফিরিয়ে নেন। ফলে চরম বিপাকে পড়েন এখানকার আমচাষিরা। আম একটি পচনশীল দ্রব্য। পাকা রোধে গাছেও রাখা যায় না। আবার গাছ হতে আম সংগ্রহ করেও সংরক্ষণ করা যায় না। তাই কারফিউ চলাকালেও আমচাষিরা বিক্রির আশায় তাদের উৎপাদিত আম বাজারে নিয়ে এসে রাস্তার পাশে সারা দিন বসে থাকে। এতে করে রাস্তায় যানজটেরও সৃষ্টি হয়। দিন শেষে চতুর ব্যাপারীরা সাময়িক সিন্ডিকেট তৈরি করে সন্ধ্যার পর চাষিদের আম অর্ধেক দামে কেনে।
এবিষয়ে সাপাহার আমচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোতাহার হোসেন চৌধুরীর বলেন, আম কেনাবেচা শুরুথেকেই ব্যাপারীরা কৃষক ঠকানোর মিশনে নেমে ৫২ কেজিতে এক মণ আম ক্রয় শুরু করেন। পরে এ বিষয়ে অনেক আন্দোলন দেনদরবার এমনকি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও সাপাহারে সরকারি সফরে এসে কৃষক বাঁচানোর জন্য সর্বসাকুল্যে ৪৮ কেজিতে এক মণ নির্ধারণ করে আম কেনা বেচার ঘোষণা দেন। শেষে কোন কাজ না হওয়ায় চাষি ও ব্যাপারীরা ৫২ কেজিতেই মণ হিসেবে আম কেনাবেচা শুরু করেন। এরই মধ্যে কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে সরকার কারফিউ জারি করে। ফলে ব্যাপারিরা আবারও সিন্ডিকেট তৈরি করে চাষিদের আম অর্ধেক দামে কেনা শুরু করলে তারা দ্বিতীয় দফায় ক্ষতির সম্মুখীন হন। কারফিউর ৫ দিনে কৃষকের বাগান থেকে সমপরিমাণ আম বাজারে এলেও দাম কমে যাওয়ায় এখানকার কৃষকরা অনুমান ৫' থেকে ৬শ' কোটি টাকা ক্ষতির মধ্যে পড়েন।
সাপাহার উপজেলার মদনশিং গ্রামের মফিজ উদ্দীন, পিছলডাঙ্গা গ্রামের নাসির উদ্দীন, গোয়ালা গ্রামের আমিরুল ইসলামসহ অসংখ্য আমচাষি জানান, 'আম চাষাবাদের প্রারাম্ভে আমরা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হ্রাসের মুখে পড়ে ছিলাম, আমের বাজার এবছর ভালো থাকায় সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম। হঠাৎ দেশের উদ্বোদ্ধ পরিস্থিতিতে কয়েক দিন ব্যাপারীরা আমাদের জিম্মি করে কম দামে আম কেনায় আমরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হই। আগামী কয়েক দিনে হয়তো সে ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারব না।
সাপাহার উপজেলা কৃষিবিভাগের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান টকি জানান, কারফিউর পাঁচ দিনে ব্যাপারিরা সিন্ডিকেট তৈরি করে কম দামে আম কেনায় ৫'-৬শ' কোটি টাকা না হলেও একটা বৃহৎ অ্যামাউন্টের ক্ষতির মুখে পড়েন এখানকার আমচাষিরা। বর্তমানে আমের বাজার আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় ও আমের দাম একটু বেশি হওয়ায় চাষিদের স্বস্তি ফিরে এসেছে।