আজকের যায়যায়দিন

কক্সবাজারের উখিয়ায় ৪ দিন টানা ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে অন্তত ৩৫টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে পড়েছে ২০ হাজার মানুষ। বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে, গ্রামীণ সড়ক লন্ডভন্ড, কালভার্ট বিধ্বস্ত, গাছপালা এবং পানের বরজ নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।

সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরী পাড়া, ঘাটঘর পাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, মনির মার্কেট, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা, পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকার পাডা, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিলসহ অন্তত ৩৫ গ্রামে পানিতে তলিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হওয়ায় অনেক গবাদি পশু মারা যাচ্ছে।

জালিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সৈয়দ আলম জানান, সমুদ্র উপকূলীয় ডেইল পাড়া, নম্বরি পাড়া ও ঘাটঘর পাড়ায় কয়েকশো পরিবার পানিতে আটকা পড়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উখিয়া সভাপতি মোহাম্মদ নুর মোহাম্মদ শিকদার জানান, ৪ দিন ধরে প্রবল বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে মাটির রাস্তাগুলো লন্ডভন্ড এবং কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও পানের বরজ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।

হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, রুমখা চৌধুরী পাড়া, বউ বাজার, পাগলির বিল, বড়বিল মনি মার্কেট সহ বিভিন্ন এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। সবজি ক্ষেতসহ আমন মৌসুমের বীজতলা পানিতে ভেসে গেছে। স্থানীয় মৎস্য চাষিরা জানান, মৎস্য ঘেরে ও পুকুরে পানি ঢুকে লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন পস্নাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার ভেরিফাই ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে এক জরুরি বার্তায়, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জনগণকে নিরাপদ স্থানে কিংবা পার্শ্ববর্তী সাইক্লোনসেন্টারে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, প্রবল পানির স্রোতে অসংখ্য বীজতলা ও পানের বরজ নষ্ট হয়েছে। গ্রামীন অভ্যন্তরীণ অন্তত ২০টি কাঁচা রাস্তা ও কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আল মামুন।

হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী তার ভেরিফাই ফেইসবুকে পানিবন্দী হওয়া পরিবারের ছবি পোস্ট দিয়ে বলেছেন, ২০ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নেমে এসেছে জনদুর্ভোগ। দুইদিন ধরে অনাহারে রয়েছে বানভাসি মানুষ। তিনি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

স্থানীয় নাগরিক সমাজের অভিযোগ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির প্রকল্প নিয়ে লাখ লাখ টাকা সভা সেমিনারের নামে খরচ করলেও বন্যায় পানিবন্দী মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। এটি খুব দুঃখজনক।

জালিয়া পালং ও পালং খালী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন জানান, জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আল মামুন জানান, সব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।