বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলে অসময়ের ফসলে লাভবান হওয়ার আশা

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
রাজশাহীর গোদাগারীতে অসময়ের কপি চাষে ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষের আগাম প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে গ্রীষ্মকালীন এই সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকরা বীজ বপনের কাজ শুরু করেছেন। বিশেষ করে জেলার গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার কৃষকরা বীজ বপনের ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা প্রায় ৮ হতে ১০ বছর ধরে এই গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করায় আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন তারা। ফলে প্রতিবছর গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষের পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর রাজশাহী জেলায় কপি চাষ হয়েছিল ৭১০ হেক্টর জমিতে। খরচের তুলনায় দাম দুই থেকে তিনগুণ বেশি পাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা কপির আবাদ বেশি পরিমাণে করছেন। এবার জেলায় কপির আবাদ বেড়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে কপির চাষ হয়েছিল। এবার তা বেড়ে ২০০ হেক্টরে পৌঁছেছে।

উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে ফুলবাড়ী, ধামিলা, শেখেরমারি, মধুপুর, গোলাই এলাকায় বেশি গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ হয়। এই এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে কপি চাষ করা হয়। এছাড়াও মাটিকাটা ইউনিয়নের কপি চাষ হয়।

উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করার জন্য বেড তৈরি করে বীজ বপন করছেন। প্রচন্ড রোদ ও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সেডের ওপরে বাঁশের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। এই ছাউনির ওপর পলিথিন ও জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এই ধরনের সেডকে গ্রীষ্মকালীন কপি চাষের জন্য পলিসেড বলছে কৃষি অফিস।

উপজেলার ধামিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, 'গেল বছর ১০ কাঠা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছিলাম। দাম ভালো পাওয়ায় এবার ২ বিঘা জমিতে কপি লাগিয়েছি। আশা করা যায় খরচ বাদে ভালোই লাভ হবে।'

গোলাই এলাকার কৃষক মিলন এবার ১০ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করবেন। এজন্য সেডে বীজ বপন করা হয়েছে। জমিতে কপির চারা লাগানোর পর থেকে ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে কপি উঠতে শুরু করে। বিঘাপ্রতি খরচ হয় সর্বোচ্চ ৪০-৫০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ৬ হাজারের মতো কপি লাগানো যায়। মানভেদে একবিঘা কপি দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এতে করে বিঘা প্রতি প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।

ঈশ্বরীপুর বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, এই কপি চাষের জন্য জুলাইয়ের মাঝামাঝি বীজ বপন করতে হয়। ৬০ থেকে ৬৫ দিন উঠতে সময় লাগে। সেপ্টেম্বর শেষে এবং অক্টোবরের শুরুতে এই সবজি উঠতে শুরু করে। এই সবজি আগাম উঠায় কৃষকরা ভালো দাম পায়।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, এই মৌসুমে কপি চাষে কৃষকরা বীজের চারা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। কৃষি অফিস থেকে তাদের সঠিক পরামর্শ ও সার-বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের সঠিক তদারকি করে ফলে প্রতিবার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, 'রাজশাহী জেলায় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় গ্রীষ্মকালীয় কপি চাষ করে আসছেন কৃষকরা। এতে করে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা। আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি তারা যেন চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে