চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদি ইউনিয়নে দেড় কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পাকাকরণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত সিংহভাগ কাজ পড়ে আছে সড়কটির। কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গড়িমসিকে দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্ষা মৌসুমে কাজ শেষ না হলে আরও দুর্ভোগে পড়বেন হাজার হাজার বাসিন্দা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে কাজের গুণগতমান ঠিক করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রকৌশল অধিপ্তর সূত্র ও স্থানীয়রা জানায়, মৈশাদি ইউনিয়নের তালতলা বাজার থেকে পালকান্দি পর্যন্ত নির্মাণাধীন এই সড়কটি হচ্ছে দেড় কিলোমিটার। নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। সড়কটি নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য ২০২৩ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা ছিল ২০২৪ সালের ৩০ জুন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত কাজের সিংহভাগ পড়ে আছে।
সড়কটির পালকান্দি থেকে শুরু করে মৈশাদি পর্যন্ত অধিকাংশ স্থানে দেখা গেল বালু ভরাটের পর বাকি কাজ থমকে আছে। বালুর সঙ্গে ইটের কনা দেওয়ার কথা থাকলেও নেই। আর যেসব স্থানে কনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যবহার হয়েছে ইটভাটার নিম্নমানের ও পরিত্যক্ত ইটের অংশ। সড়ক সমান করতে গিয়ে ওইসব কনা রোলার মেশিনে গুঁড়ো হয়ে অনেকটা নিশ্চিহ্ন অবস্থায়।
মৈশাদি গ্রামের বাসিন্দা রুবেল হোসেন বাবু ও মো. রফিক বলেন, 'সড়কটি নির্মাণের শুরুতে অনিয়ম শুরু হয়েছে। গাইড ওয়াল দিতে গিয়ে পাকাকরণ কাজে কম সিমেন্ট ব্যবহার এবং রড দেওয়া হয়নি। এরপর গাঁথুনির কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। আমরা প্রতিবাদ করলেও ঠিকাদারের লোকজন তাদের ইচ্ছামতো কাজ করেছে।'
সড়কের তালতলা অংশের বাসিন্দা মজিবুর রহমান মিজি ও আবদুর রহমান খান বলেন, 'আমরা এলাকার অনেক সড়ক নির্মাণকাজ দেখেছি। কিন্তু এত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেখিনি। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ নিয়ে গড়িমসি করছেন। বছর পার হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।'
আরেক বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, সড়কটি নির্মাণকাজে বড় অনিয়ম হচ্ছে আগের চাইতে সড়ক নিচু হয়ে যাচ্ছে। উঁচু করা না হলে বর্ষা মৌসুমে পানি উঠে যেতে পারে। একই সঙ্গে গাইড ওয়াল হয়েছে নিম্নমানের।
তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী কাশেম মিজি বলেন, 'সড়ক নির্মাণকাজে অনিয়মের বিষয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে আসেননি। আমরা চাই, সড়কটি যেন সঠিকভাবে নির্মাণ হয়।'
ঠিকাদার নান্টু মিয়া বলেন, 'কাজ করতে গেলে ভুলত্রম্নটি হতে পারে। যেসব স্থানে সমস্যা হয়েছে, সেগুলো সমাধান করা হবে।'
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আইয়ুব খান সড়কটির কাজের তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি বলেন, 'নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে হাইমচর উপজেলার মেসার্স স্পিহা কনস্ট্রাকশন। কাজের শুরুতে স্থানীয়ভাবে সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে সমস্যা থাকলেও তা ঠিক হয়ে যায়। কাজের অনিয়মের বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। এরপরই ঠিকাদারকে নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সঠিকভাবে কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'