কোটা সংস্কার আন্দোলন-পরবর্তী সহিংসতায় দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিভাবে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। তবে কুমিলস্নার তিতাসের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখায় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সরেজমিন উপজেলার গাজীপুর মডেল সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মঙ্গলবার বেলা ১২টায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের কর্মরত প্রধান শিক্ষকসহ ৯ জন সহকারী শিক্ষক শিক্ষকমন্ডলির কক্ষে অবস্থান করে গল্পে মেতে আছেন। তারা জানান, বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকলেও সব শিক্ষককে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অবস্থান করতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসে দাপ্তরিক কাজে আসা বাঘাইরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, 'সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে গিয়ে সব শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করে আমি দাপ্তরিক কাজে উপজেলা অফিসে এসেছি।' একই কথা বলেন ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
জিয়ারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শ্রেণি শিক্ষকদের তেমন একটা কাজ নেই, তারপর ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বসে হোক, গল্প করে হোক প্রতিদিন এভাবেই কাটাতে হচ্ছে। গাজীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মঞ্জু মনিরা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন নির্জন আঙিনা। তাদের ছাড়া ভালোই লাগে না। একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুল হক সরকার বলেন, সব শিক্ষককে একসঙ্গে এভাবে খালি স্কুলে না রেখে পর্যায়ক্রমেও দায়িত্ব দিতে পারত।
জানা যায়, গত ২০ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলমান পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বু্যরোর লার্নিং সেন্টারগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা পারভীন বানু শিক্ষকদের হোয়াটঅ্যাপ গ্রম্নপের একটি পোস্ট করেন, যাতে লেখা ছিল 'ডিডি অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষকরা বিদ্যালয় চলাকালীন বিদ্যালয়ে অবস্থান করে শ্রেণি পাঠদান ব্যতীত অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।'
এদিকে, অনেকে আবার ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, 'স্কুল দেখাশোনার জন্য কর্মচারী আছে। তাদের দায়িত্ব কেন আমরা পালন করব। বিশেষ করে, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা প্রতিদিন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের গিয়ে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন। সেই ভয়ে ও নির্দেশনার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে সারাদিন বিদ্যালয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে।'
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা পারভীন বানু বলেন, 'আমি এখন লালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছি। সরকারি নির্দেশনায় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকাজ বন্ধ থাকলেও ডিডি স্যারের মৌখিক নির্দেশনায় প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'