বান্দরবানে বহুতল একাডেমিক ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ক্যমুই অং মারমা, বান্দরবান
বান্দরবান সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে নতুন ৭ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও নির্মাণ কাজেও করা হয়েছে অনিয়ম। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণাধীন প্রকল্পের এরিয়ায় কাজের বিবরণসহ তথ্যসম্বলিত সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। ফলে এই কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন মানের ইট ও নিম্নমানের ইটের খোয়া। দোতলা ও তিনতলায় চলছে দেয়ালের গাঁথুনির কাজ। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে দুই ও তিন নম্বর ইট। ভবনের মূল স্থাপনার পিলারের ঢালাই চলছে স্থানীয় বালু দিয়ে। নির্মাণ কাজে দেখভালের দায়িত্বে থাকা আরমান নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার নিয়ে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে বলেন, 'আপনারা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।' তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাউকেই পাওয়া যায়নি সেখানে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ অর্থবছরে ১০ কোটি ১০ লাখ ৪৭ হাজার টাকায় বান্দরবান সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে ৭ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবান। টেন্ডারে ভবনটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল নিয়াজ হাসনাত জেবি। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানকে একই বছরের ৩১ আগস্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়- যা ২০২৩ অর্থবছরের ৩১ ফেব্রম্নয়ারি শেষ হবার কথা।
আনোয়ার হোসেন নামে এলাকার এক বাসিন্দা জানান, 'নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণাধীন প্রকল্পের এরিয়ায় কাজের বিবরণসহ তথ্যসম্বলিত সাইনবোর্ড টানানোর কথা। কিন্তু এখানে কোনো সাইনবোর্ড দেখছি না। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ ভবন নির্মাণে অনিয়ম করার উদ্দেশে তথ্যসম্বলিত সাইনবোর্ড টানাচ্ছে না।'
সালাউদ্দিন নামে আরেক বাসিন্দা জানান, 'নির্মাণাধীন ভবনের প্রয়োজনীয় তদারকি না থাকায় সিডিউল অনুযায়ী কাজ হয়নি। ভবন নির্মাণের শুরু থেকে বিভিন্ন কাজে অনিয়ম করেছে তারা। মূল স্থাপনার পিলার, গ্রেডবিম ঢালাইয়ের সময় এক ব্যাগ সিমেন্টে তিন বস্তা কংকর ও দেড় বস্তা বালু দেওয়ার নিয়ম থাকলেও দেওয়া হয়েছে দুই থেকে আড়াই বস্তা বালু। এছাড়াও ৫০ শতাংশ সিলেট বালুর (এফএম ২.৫) সঙ্গে ৫০ শতাংশ স্থানীয় বালু মিশিয়ে ঢালাই দেওয়ার কথা। কিন্তু ৭০ শতাংশ স্থানীয় বালু দিয়ে শুধু ৩০ শতাংশ সিলেটের বালু ব্যবহার করা হয়েছে।'
অন্যদিকে ধীরগতিতে চলছে এ ভবনের নির্মাণের কাজ। দেড় বছর মেয়াদের কাজ তিন বছরেও শেষ না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে নানা কার্যক্রম, ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল নিয়াজ হাসনাত জেবির স্বত্বাধিকারী আবুল হাসনাত বলেন, 'বান্দরবানের ইটভাটার মালিকরা এক নম্বর ইটের টাকা নিয়ে নিম্নমানের ইট সরবরাহ করেছে। পরে প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে বাছাই করে ভালোমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখন বান্দরবানের বাইরে থেকে ভালোমানের ইট এনে কাজ করা হচ্ছে।' এদিকে পিলার ও গাঁথুনীর পরবর্তীতে কিউরিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত পানি দেওয়ার কথা, কিন্তু কেন দেওয়া হচ্ছে না প্রশ্নে তিনি বলেন, 'নির্মাণ কাজ দেখভালের জন্য যে লোক রেখেছিলাম সে নিয়মিত পানি দিত না। তাই তাকে ছাটাই করা হয়েছে। নতুন লোক কাল-পরশুর মধ্যে যোগদান করলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।'
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, নানা সমস্যার কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি তদন্তে যাব, যদি নির্মাণ কাজের গুণগতমান ঠিক না থাকে এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে থাকে তা ভেঙে ফেলা হবে।'