'অবমাননা': মহসীন রশিদের ক্ষমার আবেদন নাকচ, রুল জারি
প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:২৮
যাযাদি রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের বিচার নিয়ে 'অবমাননাকর' বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে আইনজীবীবী মহসীন রশিদের নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন নাকচ করেছে আপিল বিভাগ।
রোববার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।
আগামী ২৯ আগস্ট রুল শুনানির দিন ঠিক করে দিয়ে আদালত বলেছে, এই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহসীন রশিদ বাংলাদেশের কোনো আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
তাছাড়া বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশনকে ইতোপূর্বে দেওয়া আদেশ প্রতিপালন হলো কি না, ওই দিনের মধ্যে তা জানাতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের তলবে এদিন হাজির হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ। কোনো আইনজীবী না নিয়ে তিনি নিজেই শুনানি করেন।
অবমাননার অভিযোগের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তাপস কান্তি বল। বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক কনক সরওয়ার আদালতে হাজির হননি; তার পক্ষে কোনো আইনজীবীও দেওয়া হয়নি।
অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ শুনানি শুরু করার আগে ইউটিউবে তার দেওয়া সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ আদালতে দেখানো হয়।
শুনানির শুরুতে অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং এরপরও তার ব্যাখ্যা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানান। এ সময় প্রধান বিচারপতি তাকে বলতে বলেন।
মহসীন রশিদ বলেন, 'সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেছেন তা ব্রিটিশ আদালতের রায়কে উদ্ধৃত করেছেন মাত্র; তার নিজের বক্তব্য নয়।'
এ সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন 'আপনি তো বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, এই আদালতকে ডিফেন্ড করে কিছু বলেননি। একটি শব্দও বলেননি। এদেশের আইনজীবী, সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে এই আদালতকে ডিফেন্ড করা উচিত ছিল।'
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, 'সাক্ষাৎকারে কনক সরওয়ার ওই দেশের (ব্রিটিশ) আদালতের মন্তব্য- 'হেয়ারসে' সাক্ষ্যের কথা উলেস্নখ করেন; আপনি সমর্থন করেছেন। আপনি বলেছেন যুদ্ধাপরাধের বিচারে পত্রিকার কাটিং, "হেয়ারসে" সাক্ষ্য ব্যবহার করা হয়েছে। আপনি না পড়ে (রায়) এসব বলেছেন।'
প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আপনি বলেছেন, চোখে না দেখে, কানে না শুনে আমাদের ট্রাইবু্যনালে সাক্ষ্য নিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।'
তখন অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ বলেন, 'আমি ওই দেশের রায়ে তা উলেস্নখ করেছে বলেছি।'
এরপর মহসীন রশিদ ক্ষমা চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলো না। রুল দিচ্ছি। শুনানি হবে। সে পর্যন্ত আপনার প্র্যাকটিস 'ডিবারড' করা হলো।'
এরপর অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ পেশাগত দায়িত্ব পালন করায় নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আপনি ওই দেশের কোর্টে যান; সেখানে প্র্যাকটিস করেন।'
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মুঈনুদ্দীকে যুক্তরাজ্যের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে মানহানিকর মামলা করার সুযোগ দিয়ে সম্প্রতি রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট।
ওই রায় নিয়ে গত ২১ জুন প্রবাসী সাংবাদিক কনক সরওয়ারের ইউটিউব চ্যানেলের একটি টকশোতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহসীন রশিদ বাংলাদেশের আদালত ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে 'অবমাননাকর বক্তব্য' দেন বলে রিটকারী আইনজীবীর ভাষ্য।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৬ জুন সাংবাদিক কনক সরওয়ার ও মহসীন রশিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী এ আবেদন করেন। চেম্বার আদালত শুনানির দিন (৪ জুলাই) ঠিক করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের রায়ে মৃতু্যদন্ড পান চৌধুরী মুঈনুদ্দীন। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালে মুঈনুদ্দীনের ফৌজদারি অপরাধের বিবরণসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই সময়ের ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল সেই প্রতিবেদন টুইটার (বর্তমানে এক্স) হ্যান্ডলে শেয়ার করেন। এরপর নিজেকে 'নির্দোষ' দাবি করে 'যুদ্ধাপরাধী' বলায় ব্রিটিশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মানহানির মামলার আবেদন করেন মুঈনুদ্দীন।
আদালতে তা খারিজ হলে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টে ফের মামলা করার আবেদন করেন এবং এরপর গত ২০ জুন যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট মুঈনুদ্দীনকে মামলা করার সুযোগ দিয়ে রায় দেয়। এই রায়ের অনুলিপি যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।