বানিয়াচংয়ে আসামি ধরতে গিয়ে হয়রানির অভিযোগ!

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:২২

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ধরতে পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে মূল আসামিকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করারও অভিযোগ ওঠে। তবে পুলিশের দাবি কারো সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ বা অযথা হয়রানি করা হয়নি। সংঘর্ষের সময়ে সংগ্রহ ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি করা হয়েছে। আর সেই আসামিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই এই মামলার তালিকাভুক্ত আসামি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের উপর হামলা করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাদের। যুবদল নেতা ওয়াহিদুল মুরাদের মা সাংবাদিকদের জানান, 'গত মঙ্গলবার রাতে আমার ছেলে ওয়াহিদুল মুরাদকে ধরতে বাসায় হানা দেয় পুলিশ। তাকে না পেয়ে আমার ছোট ছেলে ব্যবসায়ী জাহিদ ফজল সুমনকে ধরে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ৪টা চেয়ার, ড্রেসিং টেবিল, থাই জানালার গস্নাস, পানির ট্যাংকি, ওয়াইফাইয়ের রাউডার, বাথরুমের দরজা ভেঙে চুরমার করে। ভাঙচুর করার সময় পুলিশের ড্রেস পড়া প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন লোক উপস্থিত ছিল।' এদিকে পরের দিন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান ওয়ারিশ উদ্দিন খানের কুতুবখানীস্থ বাসায় তাকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালায়। সেখানে ওয়ারিশকে না পেয়ে তার জ্যেষ্ঠ ছেলে অসীম খানকে ধরে নিয়ে যায়। অসীম খান বর্তমানে বীমা কোম্পানিতে কাজ করছেন। রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেখানেও যাওয়ার সময় পুলিশ পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে যায় বলে জানান বিএনপি নেতা ওয়ারিশ উদ্দিন খান। বিষয়টি নিয়ে ভয়ে অনেকেই মুখ খোলতে রাজি হননি। আসামি না হয়েও হামলার সঙ্গে জড়িত না থাকার পরও অনেকেই পুলিশের হয়রানির ভয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অন্যত্র। আশ্রয় নিয়েছেন নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। অন্যদিকে মামলায় অজ্ঞাত আসামি ধরার নামে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব ঘটনায় নিরপরাধ প্রতিপক্ষকে হয়রানির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন গুটিকয়েক নেতা। ব্যক্তিগত বিরোধ, নির্বাচনের সময় পক্ষে না থাকা ঘটনায়ও প্রতিপক্ষকে এই মামলায় জড়ানো হচ্ছে। মামলার আইও এসআই সন্তোষ চৌধুরী জানান, 'সম্পূর্ণ প্রমাণের ভিত্তিতেই আসামিদের ধরা হচ্ছে। আমরা কাউকে অযথা কোনোরকম হয়রানি করছি না। তবে আসামি নিয়ে বাণিজ্য যে হচ্ছে সেটা আমরাও শুনেছি।' এসআই সন্তোষ চৌধুরী আরও জানান, 'আমাদের অগোচরে যদি এমনটা কেউ করে থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না। অনেকেই নাম দিচ্ছেন সেটা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।' বানিয়াচং থানার ওসি দেলোয়ার হোসাইন জানান, 'পুলিশ কাউকে হয়রানি করেনি। যারা প্রকৃত আসামি শুধুমাত্র তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশ কারও বাড়ির কোনো কিছু ভাঙচুর করেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে এটা গুজব। কে বা কারা এমনটা করছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। তবে আসামি ধরার নামে স্কুল-কলেজের নিরীহ শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধে পুলিশকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।' প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় বানিয়াচং বড় বাজারের শহীদ মিনারের সামনে কোটাবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় বানিয়াচং থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম বাদি হয়ে ২২ জুলাই বানিয়াচং থানায় ৯০ জনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাত ৬ থেকে ৭শ' জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।