নীলফামারী সদরের রামগঞ্জ বাজার এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা আবু রায়হান বাহারি রঙের বিদেশি রঙিন মাছের চাষাবাদে মাসে বাড়তি আয় করছেন। শখের বশে শুরু করলেও চার বছরেই তরুণ এ উদ্যোক্তা পেয়েছেন সাফল্য। শুরুতে বাড়ির উঠানে ৫০০ টাকায় ১০টি মিক্সগাপ্পি মাছ কিনে চাষাবাদ শুরু করেন। ছোট্ট পরিসরে প্রজেক্ট শুরু করলেও বর্তমানে ২১টি পাকা চৌবাচ্চায় করছেন এ চাষাবাদ।
জানা যায়, ২০২০ সালের শুরুতে করোনা মহামারির সময় নীলফামারী শহরের একটি অ্যাকোয়ারিয়াম ফিশের দোকান থেকে শখের বশে ৫০০ টাকা দিয়ে ১০টি রঙিন মাছ কেনেন আবু রায়হান। তখন মাছের নামও জানতেন না তিনি। পরে জানতে পারেন, সেগুলো মিক্সগাপ্পি প্রজাতির ছিল। গ্রামের বাড়িতে বালতিতে রাখেন। ১৫ দিন পর পানি পরিবর্তন করার সময় কয়েকটি মাছের পেটে ডিম দেখতে পান। পরে এগুলো ডিম থেকে পোনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর তিনি ধীরে ধীরে চৌবাচ্চা তৈরি করে বাড়াতে থাকেন রঙিন মাছ চাষ। কিছুদিন পরপরই মাছগুলো বাচ্চা দিত। এভাবে ধীরে ধীরে মাছ বাড়তে শুরু করে। এখন তার খামারে ৩০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।
মাছ চাষি আবু রায়হান বলেন, 'আমার এমন কিছু করার ইচ্ছা ছিল যেখানে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আমি দেখলাম, রঙিন মাছ চাষ আমাকে আনন্দ ও অর্থ দুটোই দিচ্ছে। ব্যবসার পাশাপাশি এটা করতে আমার তেমন কষ্ট হচ্ছে না। তাই বড় পরিসরে শুরু করার চেষ্টা করি। এ কাজে পরিবারের সবাই আমাকে সহায়তা করে। বলতে গেলে অনেকটা খেলার ছলেই এই ফার্ম চলছে।'
বর্তমানে প্রজেক্টে ২ লাখ টাকার সেটআপ আছে জানিয়ে আবু রায়হান বলেন, 'আমার খামারে বর্তমানে মিক্সগাপ্পি, শর্টটেইল, রেড টেইল, পস্নাটিনাম ডাম্বু, ইয়ার অ্যালবাইনো কই, কই টক্সিডো, বস্নু হেড সামু রাই, রেড মস্কো, স্নাক স্কিন গাপ্পি, কোবরা, ব্যাক বেলুন মলি, হোয়াইট বেলুন মলি, জেবরা, গেস্না টেট্রা, মুন টেইল মলি, কই কার্প, কমেট কাপ এবং মিকি মাউস পস্নাটি আছে। এখানে আরও ইনভেস্ট করার পরিকল্পনা আছে।'
আবু রায়হান বলেন, 'আমার নিজস্ব একটি ফেসবুকে পেজ ''রঙিন মাছের খামার নীলফামারী'' নামে রয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করে অনেকে আমার এখানে আসেন। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা রঙিন মাছ কেনেন। পাশাপাশি নীলফামারী ও সৈয়দপুরের ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবে এখান থেকে নিয়ে যান। আকার ভেদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ১০ টাকা থেকে ৫শ' টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সারাদেশে অক্সিজেন ব্যাগে এসব রঙিন মাছ পরিবহণ করা হয়।'
বর্তমানে আমার সংগ্রহে ৩০ প্রজাতির ২৫ হাজার পিস রঙিন মাছ রয়েছে। এসব মাছের বাজারমূল্য ৪-৫ লাখ টাকা। তবে এই মাছের খামারে মৎস্য কর্মকর্তাদের তেমন সহযোগিতা পাননি। বিভিন্ন সময়ে মাছের সাধারণত পাখনা ও ফুলকা পচা রোগ হয়। আর উঁকুনের আঘাতে ক্ষত তৈরি হয়। সেগুলো নিজ অভিজ্ঞতায় পরিমাণমতো লবণ, পটাশ, ফিটকিরি আর চুন ব্যবহার করে চিকিৎসা দিয়ে আসছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও পরিধি বাড়ানো সম্ভব।
নীলফামারী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সাইদ বলেন, পুরোপুরি আমদানি নির্ভর এ খাতের অর্ধেকের বেশি চাহিদা পূরণ করছেন রায়হানের মতো তরুণরা। বিদেশেও এর বেশ চাহিদা রয়েছে। মাছ চাষে আগ্রহ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।