মৌলভীবাজারে খাস জলাশয় দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহত ও আহত ৫০ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ১২ জন আহত এবং ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে দুজন তীরবিদ্ধ হয়েছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নে সরকারি খাস জলাশয় দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নোমান মিয়া (২৮) নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা পূর্ব খলিলপুর ও মনূমুখ ইউনিয়নের মধ্যবর্তী পূর্ব লামুয়া (কর্মদপুর) গ্রামে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, জলাশয় দখল সংক্রান্ত জের ধরে ওই গ্রামের এমদাদুল হক লেফাস ও আনর মিয়া গ্রম্নপের মধ্যে গেল শনিবার রাতে তুমুল মারামারি হয়। রাতের ঘটনাটি কোনোরকম স্থানীয়রা সামলে নিলেও রোববার ভোর ৬টা থেকে আবার উভয় পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে লোহার রড, ধারাল বাঁশ ও বন্দুক ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘ লড়াই শেষে হাসপাতালে নেওয়ার পথে এমদাদুল হক লেফাস গ্রম্নপের নোমান মিয়া মারা যান। আহতদের মধ্যে গুরতর জখম এমদাদুল হক লেফাসকে জরুরি চিকিৎসা দিতে রোববার সকালে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতের স্থানীয় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, মৌলভীবাজার ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতরা হলেন- মুকিত মিয়া (৪৫), মহসীন (৩০), আকবর (৩৫), ছফি মিয়া (৫০), রব্বান মিয়া (৫৫), মিছিল (৩৫), লেফাস মিয়া-২ (৬০), জাবেদ মিয়া (২৮), আকমান (৩০)। এ ছাড়া অন্যান্য আহতদের নাম ও তাদের অবস্থা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। স্থানীয় খলিলপুর ইউপি সদস্য মিলন মিয়া বলেন, 'প্রথম দফা মারামারির ঘটনার পর আমরা গত রাত ৩টা পর্যন্ত আপস-মীমাংসায় ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু উভয় পক্ষকে সমঝোতায় আনতে পারিনি।' মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, 'ওই এলাকায় মারামারির খবর পেয়ে আমি, সদর সার্কেল ও থানার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন গ্রামশূন্য এলাকা। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঠিক কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে জানতে চাইলে ওই এএসপি বলেন, ওখানে খাস জলাশয় ও কিছু মালিকানাধীন জমি রয়েছে। এগুলো নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। তবে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোগঞ্জের ভৈরবের গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ী গ্রামে পাওনা টাকা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছে। রোববার দুপুরে মুন্সিবাড়ী ও রঙিলা মেম্বারের গোষ্ঠীর মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। আহতদের মধ্য দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করে ডাক্তার। অপর আহতরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসা নিয়েছে। জানা গেছে, মুন্সিবাড়ীর নজরুল ইসলাম রঙিলা মেম্বারের বাড়ী রুবেলের কাছে ড্রেজারে বালু কাটার বিল বাবত এক লাখ চার হাজার টাকা পেতেন। দীর্ঘদিন পাওনা টাকা রুবেল না দেওয়ায় দুজনের মধ্যে প্রথমে তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে ঘটনাটি সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ১২ জন আহত হয়। স্থানীয় গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার কবির বলেন, রুবেল নামে এক ব্যক্তি ড্রেজারের বালু নিয়ে নজরুলকে তার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। ঘটনায় ১০-১২ জন আহত হয়েছে। ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক মাজহারুল হক জানান, পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় ঘটনাটি ঘটে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যারম্যান ও মেম্বারদের সহায়তায় সংঘর্ষ থামে। ঘটনাটি মীমাংসার প্রতিশ্রম্নতি দেন চেয়ারম্যান শাহরিয়ার। তারপর পুলিশের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে জমিতে ধানের চারা রোপণ করাকে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের সঙ্গে স্থানীয় এক পরিবারের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে তীর বিদ্ধ দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার সকালে উপজেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বৈরচুনা ইউনিয়নের দক্ষিন মাধবপর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বৈরচুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমু জানান, সকালে মাধবপুরে ১০ কাঠা জমি দখলে নিতে আমন ধানের চারা রোপণ করতে যায় ওই এলাকার আদিবাসী মশে হাজদা ও তার লোকজন। এতে বাধা দেন আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যরা। উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির এক পর্যায়ে আদিবাসীরা তীর ছোড়ে। তীরবিদ্ধ হন রাজ্জাক ও তার ভাই আনছার আলী। উভয়কে পীরগঞ্জ হাসপাতালে আনা হয়। আনছারের শরীরে লাগা একটি তীর বের করা সম্ভব হলেও রাজ্জাকের হাঁটুর ওপর ঢুকে পড়া তীরটি বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। তাকে দিনাজপুরে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। পীরগঞ্জ থানার ওসি খায়রুল আনাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর হাতে আটক আদিবাসী রামবাবুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এখনো লিখিত অভিযোগ পাননি।