কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা মোকাবিলায় দেওয়া কারফিউ শিথিলের পর রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কারফিউ জারির পর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল এখন তেমন একটা নেই বললেই চলে। কারফিউ শিথিল থাকায় রংপুর মহানগর এলাকায় লোকজনের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এর আগের দিন শুক্রবার তা ১৩ ঘণ্টা শিথিল ছিল। এতে স্বস্তি এসেছে জনজীবনে। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার দুপুরে রংপুর নগরীর জাহাজ কোম্পানি, শাপলা চত্বর, পার্ক মোড় ও মর্ডান মোড় ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর মহানগর এলাকায় লোকজনের সমাগম বাড়ার পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সেরেছেন। বাইরে বের হতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। দূরপালস্না, আন্তঃজেলা ও উপজেলা রুটে বাস চলাচল করছে। বাস স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, রংপুর মহানগরসহ জেলায় সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক। সান্ধ্য আইন জারির পর থেকে রংপুরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। দ্রম্নতই সব কিছু স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদী তিনি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করা দুষ্কৃতকারীরা রংপুরে গত ১৬ জুলাই থেকে তিনদিন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও ব্যবসায়িক ভবনে নজিরবিহীন তান্ডব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময়ের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল মহানগর তাজহাট থানা, গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন পুলিশ বক্স, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের কার্যালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ভবন, পরিবার-পরিকল্পনা অফিস, মুক্তিযোদ্ধা ভবন। এ সময়র্ যাব-বিজিবি, পুলিশের সাতটি গাড়ি, তিনটি ট্রাকসহ ২৫টিরও বেশি যানবাহন এবং ১২০ টির বেশি মোটর সাইকেল ও অটোরিকশা পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। এমনকি তাজহাট থানা থেকে মোটর সাইকেল ও রিকশাসহ, কম্পিউটার, মামলার আলামত, ফোর্সের ট্র্যাঙ্ক ভেঙে লুটপাট করেছে দুষ্কৃতকারীরা।
পুলিশ কমিশনার বলেন, দুর্বৃত্তরা সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটক, সিসিটিভি ক্যামেরা, দুটি ময়লার গাড়ি, মডার্ন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অর্জন ও শাপলা চত্বরের রেলিং, টাউন হলে মুজিববর্ষের ডিসপেস্ন, সোনালী ব্যাংক, সমবায় মার্কেট ভবন, সাদমান আবাসিক হোটেল, জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেট, সিটি করপোরেশনের সম্প্রচার করা তিনটি এলইডি টিভিসহ নগরীর বিভিন্নস্থানে ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন রোড ডিভাইডার, ধাপ পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ ছাড়া কারাগার, জেলা পুলিশ লাইন্স, ট্রাফিক অফিস, সার্কিট হাউজ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের বৈদু্যতিক মিটার ভাঙচুর, ডিসি এসপির বাংলোয় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টা চালানো হয় সোনালী ব্যাংক, বুথ, মর্ডান মোড়ের অজর্ন ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। এসব ঘটনায় অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে।
তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত ১৪টি মামলায় দুই শতাধিক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত চলছে অর্থের জোগানদাতা ও মদদদাতাদের।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন জানান, রংপুর মহানগরীসহ বিভাগের আট জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। শিগগিরই সান্ধ্য আইন সম্পূর্ণরুপে তুলে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।