দেশে যেকোনো আন্দোলন শুরু হলেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম জনপদ সাতকানিয়া। হোক সেটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলন কিংবা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। যেকোনো আন্দোলনে সহিংসতার উত্তাপ ছড়াতে মাঠে থাকেন এ জনপদের বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তবে সংঘাতপূর্ণ জনপদ হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়া উপজেলার এবারের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে কমবেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও এ উপজেলা ছিল একেবারে শান্তশিষ্ট। হয়নি কোনো সংঘাত-সহিংসতা এবং মিটিং-মিছিল। তবুও চলছে ধড়পাকড় এবং ঘরে ঘরে তলস্নাশি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে নাশকতার অভিযোগে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তলস্নাশির পাশাপাশি চলছে ধড়পাকড়। গ্রেপ্তার এড়াতে ঘরছাড়া হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। গত শনিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার প্রত্যেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ নেতাকর্মী রাতে বসতবাড়িতে থাকছেন না। কেউ থাকছেন আত্মীয়-স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীর বাড়িতে আবার কেউ পার করছেন নির্ঘুম রাত।
বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবং পরে নাশকতা ও সহিংসতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ মামলার বেড়াজাল থেকে না বেরোতেই আবারও ধড়পাকড় শুরু হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অনেকে।স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেন্দ্রীয়ভাবে সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করলেও এ আন্দোলনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবুও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারদের মুক্তি ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানান তারা।
তবে পুলিশ বলছে, তাদের দাবী গত শনিবার (২০ জুলাই) সাতকানিয়া পৌর এলাকার মো. এমরান নামের এক ছাত্রলীগ নেতা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উলেস্নখ ও ৮০-৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করেছেন। এ মামলার এজাহারে ঘটনাস্থল হিসেবে উলেস্নখ করা হয় উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের কেরানিহাটকে। মামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিগত সময়ের একটি গাড়ি পোড়ানোর মামলাও রয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম রসূল মোস্তাক বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়াও উপজেলায় কোনো আন্দোলন হয়নি। তবুও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে তলস্নাশি চালিয়ে প্রায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের অহেতুক হয়রানি ও বিভ্রান্তি করা হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'সাতকানিয়ার অনেকে বিভিন্ন কাজে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করেন। শহরে অবস্থানের সুবাদে অনেকে সহিংসতার সঙ্গে জড়িতও থাকতে পারে। বিষয়টি সহজেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জড়িতদের সনাক্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে।'
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শিবলী নোমান বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পরিকল্পিতভাবে ঢুকে যারা দেশব্যাপী সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুধুমাত্র তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।