রাজশাহীর পর সারাদেশে আম উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে উত্তরের জেলা নওগাঁ। মাটি ও জলবায়ুর বিশেষত্বের কারণে স্বাদে অতুলনীয় বরেন্দ্র অধু্যষিত এ অঞ্চলের আম। বাইরের জেলাগুলোতে যখন আমের মৌসুম শেষের পথে তখনো এখানে প্রচুর পরিমাণে আমরুপালি আম পাওয়া যায়। যেটাকে নিজেদের ভাগ্য বদলের চাবিকাঠি হিসেবে নিয়েছেন স্থানীয় আম চাষিরা।
টানা ৩ দিন কারফিউয়ের প্রভাবে তাদের সেই ভাগ্যের দুয়ার এবার আগেভাগেই খুলে গেছে। গত ৪ দিনের ব্যবধানে জেলার সবকটি আমের বাজারে সরবরাহ কমিয়ে এবার প্রতি মণ আমের দাম অন্তত ১ হাজার টাকা বাড়িয়েছেন স্থানীয় আম চাষিরা। এতে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা।
আম চাষিরা বলছেন, শেষ সময়ের আমরুপালি আম সবচেয়ে বেশি চাষ হয় এ জেলায়। মৌসুমের শুরুর চেয়ে আগস্টে দ্বিগুন দামে এ আম বিক্রি হয়। কারফিউ'র প্রভাবে এবার আগস্টের আগেই দ্বিগুন দামে আম বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন কারফিউ শেষ হলেও আর দাম কমবে না। এতে গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেশি দামে আম বিক্রি করা যাবে। জেলার বৃহত্তর আমের হাট সাপাহারে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, কারফিউ'র প্রভাবে এ হাটে কমেছে আমের সরবরাহ। এদিন মানভেদে প্রতি মণ আমরুপালি আম ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা, বারি-৪ ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা এবং ফজলি ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। কারফিউ শুরুর আগে গত ১৯ জুলাই এ হাটে মানভেদে প্রতি মণ আমরুপালি আম ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা, বারি-৪ ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা এবং ফজলি ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল।
সাপাহার সদর ইউনিয়নের বাহাপুর গ্রাম থেকে আম বিক্রি করতে আসা চাষি রাকিব হোসেন বলেন, '১০ মণ আমরুপালি বিক্রি করতে এসেছিলাম। বাজারে এসে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ৪ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে ৪৩ হাজার টাকায় আম বিক্রি করলাম। এই একই আম ৪ দিন আগেও ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বেশি পেয়ে ভালো লাগছে।'
পার্শ্ববর্তী বিদ্যানন্দী গ্রাম থেকে আম বিক্রি করতে আসা চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'কারফিউ শিথিল থাকায় ৪ দিন পর বাজারে আম বিক্রি করতে এসেছিলাম। আসার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা মৌসুমের সর্বোচ্চ দাম হাঁকছিলেন। সরবরাহ কম থাকায় আমের বাজার প্রতিনিয়ত বাড়ছিল। সর্বশেষ ৫ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ১২ মণ আমরুপালি ৬২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করলাম। যেখানে ৪ দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ আমে ১ হাজার ৩০০ টাকা করে বেশি পেয়েছি।'
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলার ১১টি উপজেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমরুপালি, নাক ফজলি, ফজলি, ল্যাংড়া বা হাড়িভাঙ্গা, খিরসাপাত, বারি-৪, ব্যানানা ম্যাংগোসহ দেশি-বিদেশি ১৬টি জাতের আম চাষ করেছেন চাষিরা। যেখানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে আমরুপালি আম। এ মৌসুমে জেলায় আমরুপালি আমের বাগানের পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর। ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর বাগান থেকে এ মৌসুমে ৪ লাখ ২৪ হাজার ২০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, লেট ভ্যারাইটিস আম চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় চাষিদের আমরুপালিসহ বিভিন্ন লেট ভ্যারাইটিস আম চাষের কলাকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ আম উৎপাদনে আগ্রহ বাড়াতে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় চাষিদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলস্বরূপ এখন নওগাঁর আম দেশ সেরা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। বাজারে চাহিদা বেড়েছে এ জেলার সুস্বাদু আমের। এ মৌসুমে জেলায় কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আম কেনা-বেচার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কারফিউ চলাকালে আম চাষিরা যেন ক্ষতির মুখে না পরে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কৃষি বিভাগের। আম বহনকারী ট্রাক ও ব্যবসায়ীদের আম কিনতে আসতে সার্বিক সহযোগিতা করবে প্রশাসন।