রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
দালালের খপ্পর

লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি ভৈরবের ২৪ যুবক

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি ভৈরবের ২৪ যুবক

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কমপক্ষে ২৪ জন যুবক রাসেল নামের এক দালালের খপ্পরে পরে স্বপ্নের দেশ ইতালি যেতে পারছে না। তারা এখন লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি, আবার কেউ কেউ লিবিয়া কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করছেন। এদের মধ্যে অনেকে বাড়িঘর ও জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে দালাল রাসেলকে ১০-২০ লাখ টাকা দিয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন লিবিয়ায় অপহরণকারীরা দাবি করছে আবারও ১০-১২ লাখ টাকা দিলে ডাংকি দিয়ে সাগর পথে ইতালি পাঠাবে তাদের। কিন্তু পরিবারগুলো দাবির টাকা না দিতে পারায় তাদের ওপর চালাচ্ছে অমানুষিক নির্যাতন। আর নির্যাতনের ভিডিও অপহরণকারীরা কৌশলে ভৈরবের পরিবারগুলোর কাছে পাঠাচ্ছে। ভিডিও দেখে পরিবারগুলোতে প্রতিদিন চলছে কান্না আজাহারি। পরিবারের সুখ-শান্তির জন্য ইতালি গিয়ে রোজগার করে টাকা পাঠাবে পরিবারের এই ছিল প্রত্যাশা। সেই আশা এখন গুড়ে বালিতে পরিণত হয়েছে।

পরিবারের অভিযোগ দালাল রাসেল কমপক্ষে ২৪ জনের কাছ থেকে ৫-৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তারা হলো- পৌর শহরের রাসেল মিয়া ৭ লাখ, একই এলাকার ফারুক মিয়াসহ তিনজনের কাছ থেকে ৬০ লাখ, নরসিংদির শিবপুরের শফিকুলের কাছ থেকে ২৩ লাখ, সবুজ, তোফাজ্জল ও মনিরের কাছ থেকে ৭০ লাখ, হাছেন আলী ও তার দুই বন্ধুর কাছ থেকে ৪৫ লাখ, সুমনের কাছ থেকে ১৪ লাখ, পঞ্চবটি এলাকার রশিদ, মালেক ও হুরুন আলীর কাছ থেকে ৬৫ লাখ টাকা দালাল রাসেলকে দেওয়া হয়। এদের মধ্য কেউ ৬ মাস আগে, কেউ ৪ মাস আগে আবার কেউ ৩ মাস আগে দালালকে টাকা দিয়েছে। ২৪ জনের মধ্য কেউ কেউ এখন লিবিয়া কারাগারে বন্দি। আবার কেউ কেউ অপহরণকারীদের হাতে বন্দি বলে পরিবারের দাবি। পরিবারের সঙ্গে কারো এখন যোগাযোগ নেই। তবে মাঝে মধ্যে অপহরণকারীরা তাদের নির্যাতনের পর পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে দিলে মোটা অংকের টাকা চাওয়া হয়। ২৪ জনের মধ্য এখনো কেউ ইতালি যেতে পারেনি বলে পরিবারের অভিযোগ।

সুমনের বাবা নুর ইসলাম বলেন, 'সুখের স্বপ্ন দেখে ছেলেকে রাসেলের মাধ্যমে ইতালি পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার ছেলে লিবিয়া কারাগারে বন্দি।'

শফিকুলের বাবা এবাদুলস্নাহ বলেন, 'আমার ছেলেকে লিবিয়ায় অপহরণকারীরা আটকে রেখেছে। এখন ১০ লাখ টাকা দাবি করেছে। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এত টাকা কোথা থেকে দিব।' হাছেন আলীর বাবা রইছ উদ্দিন বলেন, 'তিনমাস যাবত আমার ছেলের কোনো খোঁজ নেই। ৪০ লাখ টাকা দিলাম রাসেল দালালকে। কিন্তু এখন আমার ছেলের খোঁজ নেই।'

গত ৪ জুলাই দালাল রাসেলকে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এখন কারাগারে পাঠিয়ে আরও বিপদ হয়েছে পরিবারগুলোর দাবি। দালাল রাসেল ছাড়া এসব যুবককে লিবিয়া থেকে উদ্ধার করা সম্ভব নয় পরিবারগুলো বলছে।

ভৈরব থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, 'ভুক্তভোগী এবাদুলস্নাহর অভিযোগের প্রেক্ষিতে দালাল রাসেলকে গত ৪ জুলাই গ্রেপ্তার করেছি। সে ২৪ জনের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। রাসেল বলছে তাদের টাকা লিবিয়ার দালালকে পাঠিয়েছে। সাগর পথে ঝামেলার কারণে তাদের পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। অপহরণকারীদের হাতে তারা কয়েকজন বন্দি এসব কথা সে অস্বীকার করে। এখন সব ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে