রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

চাল ভাজা বিক্রি করে সংসার চালান বিধবা নুরিয়া

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
চাল ভাজা বিক্রি করে সংসার চালান বিধবা নুরিয়া

৩৬ বছর ধরে হাতে নিয়ে চানাচুর ও চাল ভাজা বিক্রি করছেন। বয়স পেরিয়েছে প্রায় ৭০, এখন আর হাঁটতে চান না তিনি। কিন্তু হাত থেকে সেই ভার নামাতেও পারছেন না। কারণ হাতে করে বিক্রি করা চানাচুর ও চাল ভাজা বিক্রির কারণে দুই মুঠো খাবার জোটে বৃদ্ধা নুরিয়ার। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী এলাকায়। স্বামী ও ছেলে মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে চানাচুর আর চাল ভাজা বিক্রি করে ভাইদের সহযোগিতায় বিয়ে দিয়েছেন। এখন সংসারের জোয়াল হাতে ক্লান্ত বৃদ্ধা নুরিয়া।

উপজেলা সদরসহ আশেপাশে বিভিন্ন হাটে বাজারে হাতে চানাচুর, বুট ও চাল ভাজা ফেরি করে বিক্রি করেন। তার কাছ থেকে চাল ভাজা, চানাচুর কিনে খাচ্ছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ।

বৃদ্ধা নুরিয়া বলেন, 'আমি খুব অভাবি। আবাদি জমিজমা নেই। যা ছিল তার স্বামীকে চিকিৎসা করতে শেষ হয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো আর সম্ভব হয়নি।'

১৯৮৮ সাল থেকে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ফেরি করে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। স্বামী আর ছেলে সন্তান মারা যাওয়ার পর অবশেষে দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে ব্যস্ত তিনি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন তিনি এক মেয়ের জামাই বাড়িতে থেকেই এসব খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার।

তার এমন চিত্র দেখে এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী মামুন বিশ্বাস। সহযোগিতাও করেন বৃদ্ধাকে। তার সহযোগিতায় ছাগল, হাঁস ও মুরগি পালন করছেন তিনি। মাত্র নয়শ' টাকা পুঁজি নিয়ে এসব খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করে প্রতিদিন তিনশ' থেকে সাড়ে তিনশ' টাকা আয় হয় বলে জানান। যা আয় হয় তা দিয়ে ছাগল, হাঁস, মুরগি পালনসহ জীবন চালাচ্ছেন বৃদ্ধা নুরিয়া। তিনি আরও বলেন, এই বয়সে শরীরটা চায় বিশ্রাম। কিন্তু বিশ্রাম নিলেও তো খিদেটা যায় না। পেটের তাড়নায় হাতে চানাচুর ও চাল ভাজা নিয়ে গ্রামগঞ্জে ফেরি করে বিক্রি করেন।

বৃদ্ধা নুরিয়া বলেন, '৭০ বছর বয়সের কোনো মা জীবন-জীবিকার তাগিদে ভার হাতে নিয়ে চানাচুর ও চাল ভাজা বিক্রি করছেন কি না জানি না। আমি করছি প্রায় ৩৬ বছর ধরে এ কাজ। ছেলেমেয়ে মানুষ করতে গিয়ে জমাতে পারিনি এক টাকাও। অনেক সময় ধারদেনা করেও চলতে হয়। এ বয়সে হাতে করে চানাচুর, চাল ভাজা, বুট বিক্রি করার শক্তি নেই। পুরো শরীরে ব্যথা। দুই মুঠো খাবারের জন্য এসব করতে হচ্ছে।'

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সাঈদী হাসান সাগর বলেন, 'সরকার ও মানবিক সংগঠনগুলোর কাছে তার এই নয়শ' টাকার পুঁজি বাড়িয়ে সহযোগিতা করে ভিক্ষা নয়, ব্যবসার মাধ্যমে আয় করে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।'

রায়গঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইলিয়াস হোসেন বলেন, 'তিনি যদি বিধবা অথবা বয়স্কভাতা পেয়ে না থাকেন তাহলে আমরা তকে এ ভাতার আওতায় নিয়ে আসব। তিনি বা তার পরিবার সহযোগিতার আবেদন করলে তাকে সহযোগিতার জন্য গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে