রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

বর্ষায় জমজমাট শাহজাদপুরের কৈজুরী ডিঙি নৌকার হাট

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনা তীরের কৈজুরী হাটে নৌকার পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা -যাযাদি

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বর্ষাকালে জমজমাট ঐতিহ্যবাহী হাট কৈজুরী ডিঙি নৌকার হাট। প্রতি বছর বর্ষা এলেই যমুনা বিধৌত এ উপজেলায় কদর বেড়ে যায় নৌকার। মানুষ চলাচল ও পণ্য পরিবহণের জন্য নির্ভরযোগ্য বাহন হিসেবে খুঁজে নেন ডিঙি নৌকা। শুধু যাতায়াত আর পণ্য পরিবহণ নয়, যমুনা, বড়াল, করতোয়া ও হুরাসাগর নদীর অববাহিকার হাজারও মানুষের মৎস্য শিকার ও কাঁচা সবজি বিক্রির জন্য নিকটবর্তী হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রধান বাহন এই নৌকা।

শাহজাদপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বদিকে যমুনার অববাহিকায় কৈজুরীহাট। প্রতি বছর বর্ষার আগমনকে ঘিরে জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত উপজেলার সবচেয়ে বড় নৌকার হাট বসে এখানে। শত বছরের পুরোনো এ হাটকেই জেলার সবচেয়ে বড় নৌকার হাট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্ষার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৈজুরী ডিঙি নৌকার হাট জমজমাট হয়ে ওঠে। হাট বসে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল অবধি যমুনার তীরে মহিউল আলম ফাজিল মাদ্রাসা মাঠ ও কৈজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠজুড়ে ডিঙি নৌকার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। স্থানীয় কৃষক, জেলে, গৃহস্থ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ হাটে আসেন নৌকা কিনতে। এই হাটে তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় মিলবে কাঠের তৈরি ডিঙি নৌকা।

নৌকার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাছ ধরা আর বর্ষা মৌসুমে ব্যক্তিগত যাতায়াত ও পশু-পাখির খাদ্য সংগ্রহের জন্য নৌকা কেনেন বেশির ভাগ মানুষ।

রতনকান্দী গ্রামের ডিঙি নৌকা ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক মিস্ত্রি বলেন, 'দুই যুগ ধরে নৌকা বানানোর কাজ করছি। আমার কাছে সাড়ে চার হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার নৌকা রয়েছে। চার হাজার টাকার নৌকা আম-কাঠ দিয়ে তৈরি। সেগুলো সাধারণত ১০ হাত হয়। আর ১২-১৩ হাত লম্বা নৌকা সাত থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কি কাঠ দিয়ে নৌকা বানানো হচ্ছে তার ওপর দাম নির্ভর করে।'

সৈয়দপুরের নৌকা মিস্ত্রি কমল সূত্রধর বলেন, সারা বছর অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষা এলেই ব্যস্ততা বাড়ে নৌকা তৈরির কাজে। দিন রাত রেডিমেট অথবা অর্ডারকৃত নৌকা তৈরিতে সময় কেটে যায়। কারখানায় অন্যান্য কারিগররা দম ফেলানোর সময় পান না। উপজেলার বিভিন্ন হাটে এগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে যান। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর নৌকার দাম একটু বেশি।

১০ নং কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন জানান, বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে নৌকা। উপজেলা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার ও যাতায়াতের জন্য নৌকার কদর বেড়ে যায়। এ সুযোগে উপজেলার বিভিন্ন কারখানায় ডিঙি নৌকা তৈরি করেন কারিগররা। সপ্তাহের শুক্রবার শত বছরের প্রাচীন এই কৈজুরী হাটে দূর-দুরান্ত থেকে ক্রেতারা ডিঙি নৌকা কিনতে এখানে ছুটে আসেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে