রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

তিতাসে ড্রেজারে ফসলি জমি ভরাটের মহোৎসব

তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
তিতাসে ড্রেজারে ফসলি জমি ভরাটের মহোৎসব

কুমিলস্নার তিতাসে বর্ষার খাল বিলে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে ফসলি জমি ভরাটের মহাযজ্ঞ শুরু করেছে বালু ও ভরাট সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ফলে দুই ও তিন ফসলি কৃষি জমি বিলুপ্তির পথে এবং জনবসতির পাশে ড্রেজার স্থাপনের ফলে ড্রেজারের বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যঘাতসহ সাধারণ জনগণের নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০৭.১৯ বর্গ কিলোমিটারের তিতাস উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে গোমতী, তিতাস, কাঠালিয়া নদীসহ অসংখ্য ছোট ছোট খাল রয়েছে। বর্ষার সুবাদে এইসব নদী-খালগুলো পানিতে টইটুম্বর। আর এই সুযোগে মৌসুমি বালু ব্যবসায়ীরা নেমে পড়েছেন বালু ব্যবসায়। উপজেলা পর্যায়ে প্রায় অর্ধশতাধিক ড্রেজার দিয়ে চলছে ফসলি জমি ভরাটের মহোৎসব। মূলত মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে উপজেলা পর্যায়ে বলগেটের মাধ্যমে এসব জমি ভরাট করা হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বলগেটে বালু ভরাটের পর তিতাসে আসতে বিকাল হয়ে যায়। বিশেষ করে বিকাল থেকে শুরু হয় অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা ড্রেজারের মাধ্যমে বলগেট থেকে নির্দিষ্ট স্থানে বালু সরবরাহের কাজ। আর তখনই সাধারণ মানুষকে বিকট শব্দ দূষণের শিকার হতে হচ্ছে।

উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে প্রতি বছর সড়কের ধারে সরকারি খাস জমি, জলাশয়, খাল, বিল, ডোবা, পুকুরসহ আবাদি কৃষিজমি ভরাট হচ্ছে। এসব জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে বসতঘর, রাস্তাঘাট, দালানকোঠা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ফসলের পরিবর্তে সেখানে শোভা পাচ্ছে পাকা দালানকোঠা। অব্যাহতভাবে ভরাট হওয়ায় উপজেলায় হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি আর এতে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, অপরিকল্পিতভাবে জমি ভরাট করায় বিভিন্ন এলাকায় বর্ষা পরবর্তী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ কৃষিজমি অক্ষত রেখে উন্নয়নের জন্য বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে দুই ও তিন ফসলি জমি সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর জোড়ালো নির্দেশনা ছিল। কৃষিজমি সুরক্ষায় নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিয়েছেন তিনি। অনেকে মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর তাগাদা উপেক্ষা করেই উন্নয়নের নামে কৃষকের স্বপ্ন ধ্বংস করা হচ্ছে।

উপজেলার বন্দরামপুরের শাহাদাত হোসেন, ইউসুফপুরের সাদ্দাম হোসেন ও নাগেরচর গ্রামের আমির হোসেন জানান, এলাকার বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যায় না। ড্রেজারের বিকট শব্দের সমস্যার কথা ড্রেজারে থাকা লোকদের বললেও তারা কর্ণপাত করছেন না। তারা অভিযোগ করেছেন, গভীর রাত পর্যন্ত ড্রেজার দিয়ে বলগেট থেকে বালু উত্তোলনের সময় বিকট শব্দে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ তাদের রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাঈদ আব্দুলস্নাহ মোস্তাফিন বলেন, কৃষি জমি ভরাট হচ্ছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে বালু দিয়ে কৃষিজমি ভরাটের কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার কৃষি বিভাগের নেই। তাই আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক-উর-রহমান জানান, কোনো অভিযোগ পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করে থাকি। তবে অন্যত্র থেকে বলগেট দিয়ে ড্রেজারের মাধ্যমে যে জমি ভরাট করা হচ্ছে সেই ব্যাপারে সরকারি কোন আইন না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে