রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
দুশ্চিন্তায় পাটচাষিরা

ভরা বর্ষা মৌসুমেও পানিশূন্য গাংনীর পুকুর ও ডোবা

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ভরা বর্ষা মৌসুমেও পানিশূন্য গাংনীর পুকুর ও ডোবা

ভরা বর্ষা মৌসুম পার হতে চললেও এখন পর্যন্ত তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। তাই নদী, খাল, বিল ও ডোবা নালাতে পানির পরিমাণ খুবই কম। ফলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তার শেষ নেই মেহেরপুরের গাংনীর পাট চাষিদের। তারা বলছেন, বাধ্য হয়েই অল্প পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। অল্প পানিতে জাগ দিলে পাটের সোনালি রং কালচে বর্ণ ধারণ করে। যে রঙের কারণে বাজারে ভালো দাম মেলে না। তাই পাট নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই। এমন পরিস্থিতিতে চাষিদের বিকল্প উপায়ে পাট জাগ দিতে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। বিকল্প উপায় হিসেবে রিবেট রেটিং পদ্ধতিতে চাষিদের পাট জাগ দিতে বলা হচ্ছে।

কৃষকরা জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের নীচু জমিতে পানি থই থই করে। বৃষ্টির অভাবে এবার খাল-বিল, ডোবা-নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে পুকুর ও গর্তের স্বল্প পানিতে পাট জাগ দিচ্ছেন চাষিরা। এতে পাটের গুণগত মান নষ্ট হয়। ফলে বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়া যায় না। এমনিতেই অনাবৃষ্টিতে বারবার সেচ দিতে হয়েছে ক্ষেতে। এতে করে ব্যয়ও বেড়েছে। সব মিলিয়ে পাটের এবার লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। ফলে আগামীতে পাটচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন সিংহভাগ চাষি।

গাংনীর বিভিন্ন মাঠে দেখা যায়, কৃষকরা পাট কেটে জমিতে ফেলে রেখেছেন। কোনো কোনো কৃষক তার ক্ষেতের উৎপাদিত পাট নসিমনে করে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে নিয়ে খাল বা ডোবায় জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক চাষি এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন ক্ষেতের পাট কোথায় জাগ দেবেন। এজন্য তারা পাট কেটে রাস্তার পাশে ও জমিতে আঁটি বেঁধে রেখে দিয়েছেন। কেউ কেউ গর্তে পাটের উপর মাটি চাপা দিয়ে জাগ দিচ্ছেন। কৃষি অফিস পলিথিন কাগজ ও ইট পাথর চাপা দেওয়ার কথা বললেও খরচ বেশি হওয়ার ভয়ে চাষিরা কৃষি অফিসের পরামর্শ মানতে নারাজ।

এ উপজেলার সিন্দুর কৌটা গ্রামের পাটচাষি হাবলু জানান, তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। খাল, বিল ও ডোবা নালাতে পানির পরিমাণ খুবই কম। বাধ্য হয়েই অল্প পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে পাটের সোনালি রং কালচে বর্ণ ধারণ করে। যে রঙের কারণে বাজারে ভালো দাম মেলে না। তাই পাট নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই। পাট বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। পাটকাঠি বিক্রি করে যদি কটা টাকা পাওয়া যায়।

বাওট কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের নিচু জমিতে পানি থই থই করে। পাট কেটে সেখানে জাগ দেওয়া হতো। বৃষ্টির অভাবে এবার খাল-বিল, ডোবা-নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কবে নাগাদ পাট কাটবেন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া স্থানীয় মরা নদীতে পাট জাগ দেওয়ার উপায় নেই। নদীটি লিজ দেওয়া হয়েছে। ফলে ইজারদাররা পাট জাগ দিতে দেন না।

কৃষকরা আরও জানান, অনেকেই পাট চাষ করে পড়েছেন উভয় সংকটে। এখন না পারছেন জাগ দিতে, না পারছেন জমিতে রাখতে। কেননা এখন ধান রোপণের সময় এসে গেছে।

বামন্দী বাজারের বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ী কাউছার জানান, চলতি মৌসুমে তারা পাট কিনছেন। নদীর পানিতে জাগ দেওয়া পাটের গুণগত মান ভালো হওয়ায় দু'হাজার ২শ' টাকা মণ পাট কিনছেন। আর যে পাটের মান খারাপ তা কেনা হচ্ছে এক হাজার আটশ' টাকা থেকে দু'হাজার টাকা মণ দরে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার এমরান হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫শ' হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো। উপজেলায় দুই জাতের পাট চাষ করা হয়। এখন পাট কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক চাষি সময়মতো তা কাটতে পারেননি। আবার সঠিকভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। চাষিদের পাট জাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে