রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
জরুরিভিত্তিতে সেতু নির্মাণের দাবি

নীলফামারীর ৩ উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
নীলফামারীর বুড়িখোড়া নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো -যাযাদি

নীলফামারীর তিনটি উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত। তাই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য জরুরিভিত্তিতে সেতু নির্মাণের দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

নীলফামারী সদরের লক্ষ্ণীচাপ ইউনিয়নের বুড়িখোড়া নদীর ওপর বসুনিয়ারডাঙ্গা গ্রামে বাঁশের সাঁকোটি অবস্থিত। সাঁকো দিয়ে নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্ণীচাপ, কাচারী, শিশাতলী, জংলীপাড়া, দুবাছুরি, বলস্নমপাঠ, কচুয়া ও দাঁড়িহারা, জলঢাকা উপজেলার ডিয়াবাড়ী ও শিমুলবাড়ী গ্রামের মানুষজন প্রতিদিন নীলফামারী জেলা শহর, ডোমার উপজেলা শহর ও জলঢাকা উপজেলায় যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া এই তিন উপজেলার শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকোটি। নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দুই ঘাটের সংযোগ রক্ষা করে। ওই বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা যাতায়াত করে থাকেন।

সরেজমিন দেখা যায়, লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে সাইকেল ও মোটর সাইকেল নিয়ে হেঁটে সাঁকো পার হচ্ছেন। অনেকে আবার পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও হেঁটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে। সাবধানে চলাচল করছে সবাই। কারণ, এর আগে সাঁকোর ওপর থেকে পড়ে অনেকে আহত হয়েছেন। একটু অন্যমনস্ক হলে যেকোনো সময় পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

জংলীপাড়ার বাসিন্দা বিমল চন্দ্র রায় বলেন, শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে কোনোরকম পারাপার হলেও বর্ষাকালে নদী জলে ভরে থাকে। তাই প্রচন্ড স্রোতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এই স্থানে একটি সেতুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো সুফল হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা ললিত চন্দ্র রায় একরাশ বলেন, 'গত বছর আমার ছেলে বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। আমরা অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করি। কৃষকদের যত মালামাল এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।'

এলাকাবাসী নবিজুল ইসলাম বলেন, 'বর্ষার সময় সাঁকো পার হওয়া অনেক কষ্টের। নদীভরা পানি থাকে। তখন সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। বহু বছর ধরে শুনি, এখানে সেতু হবে। কিন্তু সেতু আর হলো না। আর হবে কি না, সেটাও জানি না।'

বসুনিয়ারডাঙ্গা গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, প্রতিবার ভোটের সময় ওই ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণের বিষয়টি ওঠে। ভোট ফুরালে জনপ্রতিনিধিদের দেখা মেলে না। মোটর সাইকেল আরোহী সাদেক আনোয়ার বলেন, 'আমার বাসা নদীর ওই পাড়ে, তাই আমাকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় মোটর সাইকেল নিয়ে পার হওয়া যায় না। ছেলে মেয়েরা বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে পারে না। সেতুর অভাবে রোগীদের পড়তে হয় সবচেয়ে দুর্ভোগে।

কাচারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিতা রানী রায় জানায়, কষ্ট করে সাঁকোর ওপর দিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় পানিতে পড়ে বইখাতা নষ্ট হয়ে যায়।

লক্ষ্ণীচাপ ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে থাকেন। তিনি বলেন, ব্রিজটি হলে হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি এলাকাবাসীর জীবনযাত্রার মান বাড়বে। ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে তিনি এলজিইডি অফিসে অনেকবার যোগাযোগও করেছেন।

নীলফামারীর স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ কবির বলেন, একটি প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ওই স্থানে একটি সেতু করার জন্য তারা চেষ্টা করছেন। তার আশা শিগগিরই সেতু নির্মাণ হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে