রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
তিতাসে জনজীবন

বড়দের পত্রিকা পড়ে, ছোটদের খেলাধুলা করে সময় পার

ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় কাজে ধীরগতি
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
  ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
বড়দের পত্রিকা পড়ে, ছোটদের খেলাধুলা করে সময় পার

কুমিলস্নার তিতাসে কোটাবিরোধী আন্দোলন পরবর্তী সংহিসতায় কারফিউ শিথিল এবং অফিস-ব্যাংক ও বিপণিবিতানগুলো খোলা থাকায় জনজীবনে অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছে। ইন্টারনেট সেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড়দের পত্রিকা পড়ার আগ্রহ বেড়েছে এবং শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠে সময় পার করছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছেন তিতাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

মোসা. মাহিমা ইসলাম। স্থানীয় ইভা কিন্ডার গার্টেনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার সহপাঠী আফছানা তাসলিম পিউ। একই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তারসহ ৫-৬ জনের একটি দল বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় নানা খেলা ও খুঁনসুটিতে মেতে আছে। আলাপ হয় তাদের একজন অভিভাবক আয়েশা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, 'মূলত স্কুল ও প্রাইভেট শিডিউলের পর বাচ্চাদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহারের প্রতিযোগিতা লেগে যেত। গত কয়েকদিন ইন্টারনেট সেবা ও স্কুল বন্ধ থাকায় আমাদের সেই শৈশবের খেলাগুলোয় তারা ফিরে গেছে। বিছানা পেতে ছোট ছোট হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে বনভোজন (চড়ুইভাতি) খেলছে। আশপাশে ছেলেগুলো দল বেঁধে ফুটবল খেলতে মাঠে গেছে। এটা আমাদের সময়ও আমরা দেখেছি।'

বৈকালীন আড্ডায় মেতে থাকা স্থানীয় ভাড়াটিয়া মরিয়ম বেগম বলেন, 'পারিবারিক কাজের ফাঁকে যেটুকু অবসর সময় ছিল ততক্ষণ আমরা মোবাইলের প্রতি বেশি আসক্ত ছিলাম। অথচ আজকের এই আড্ডার মধ্যেও অনেক কিছু শেখার আছে।'

বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলী আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শাহজামান শুভ। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রতিদিন কড়িকান্দি বাজারস্থ উপজেলা প্রেস ক্লাবে এক ঘণ্টারও অধিক সময় ব্যয় করেন। তিনি বলেন, 'এখানে অনেক পত্রিকার ব্যবস্থা আছে। পত্রিকা ছাড়া রাষ্ট্রের পরিস্থিতি জানার কোনো মাধ্যম না থাকায় শুধু পত্রিকার টানে এনে চলে আসি।' স্থানীয় হকার মো. সেলিম জানান, 'আগের পত্রিকার প্রতি মানুষের কোনো আগ্রহ ছিল না। বেলাশেষে দু-তিনটি পত্রিকা থাকলে কাউকে দেওয়া যেত না, এখন পত্রিকার বান্ডেল আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রচুর চাহিদা আছে। পাঁচদিনে দুইদফা পত্রিকার চাহিদা বাড়িয়েছি।'

কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিতাসের পার্শ্ববর্তী উপজেলা দাউদকান্দি, হোমনা ও মেঘনায় কোটা সংস্কারের পক্ষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-মিছিল ও রাস্তা অবরোধ করলেও তিতাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। তবে গত ১৭ জুলাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কড়িকান্দি বাজার ও গাজীপুর বাস স্টেশনে ছোট্ট পরিসরে পৃথকভাবে বিক্ষোভ-মিছিল করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। গত শুক্রবার মধ্যরাতে কারফিউ জারি হলেও শনিবার দিনভর মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল। বিশেষ করে গৌরীপুর-বাঞ্ছারামপুর ভায়া হোমনা সড়কের স্থানীয় যানবাহন চলাচল ছিলও স্বাভাবিক।

এদিকে গত শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্রশাসনের উদ্যোগে পৃথক পৃথকভাবে মাইকিং করে কারফিউ জারির বিষয়টি জানানো হয়। গত রোববার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারফিউ বাস্তবায়নে কঠোর ছিল। তবে সোমবার সকাল থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় রিবাজ করছে। বুধবার বাতাকান্দি বাজারে সাপ্তাহিক হাটে মানুষের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া কড়িকান্দি বাজার, মাছিমপুর বাজার, আসমানিয়া বাজার, উজিরাকান্দি বাজার, কলাকান্দি বাজার, গোপালপুর বাজারের সব দোকানপাট অন্য দিনের মতো খোলা ছিল। উপজেলা প্রশাসনের স্বল্পপরিসরে দাপ্তরিক কাজ চালু থাকলেও সেবা প্রত্যাশীরা ছিল খুব কম।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড তিতাস শাখার ম্যানেজার রণজিত কুমার দেবনাথ জানান, ব্যাংকের নিজস্ব সার্ভারে কাজ চলছে। ব্যাংকের নিজস্ব ব্রাউজার ছাড়া অন্য কোনো ব্রাউজার চলছে না। তবে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা থাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় আজকে গ্রাহক কিছুটা কম।

কড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলমাসুর রহমান বলেন, 'পরিষদের প্রায় সব কাজই ইন্টারনেট নির্ভর। মূলত ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমরা জনগণকে সেবা দিতে পারছি না।'

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল হাসান জানান, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ। এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রশাসনের সব দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মস্থলে রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সেবাপ্রত্যাশী কিছুটা কম। চলমান আন্দোলনে তিতাসে অপ্রীতিকর বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটায় জনগণকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে