দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর বিশ্বনাথপুর ১৫৬নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা। আছে অবকাঠামো, আলমারি, চেয়ার-টেবিল ও শিক্ষাসামগ্রী। শুধু নেই কোনো শিক্ষার্থী। তবে বিভিন্ন শ্রেণির হাজিরা খাতায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি। কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। স্কুলে শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
সরেজমিন দেখা যায়, স্কুলটিতে প্রবেশ করতেই স্কুলের মাঠ নয় যেন গো-চারণ ভূমি। বিদ্যালয়টির একটি দ্বিতল ভবন। ভবনে নিচতলা ও ওপর তলায় রয়েছে ক্লাসরুম। সবগুলো শ্রেণি কক্ষই ফাঁকা। কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। বেঞ্চগুলো সুন্দর করে সাজানো অবস্থায় পড়ে আছে। স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন পিটিআই ট্রেনিং করছেন।
অফিস কক্ষে শুধু একজন সহকারী শিক্ষকের দেখা পাওয়া গেছে। অরেকজন সহকারী শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বাড়ি চলে গেছেন। পরে ফোন করে সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে বিদ্যালয়ে আনা হয়।
হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বাড়িতে গেছেন কেন জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ছাত্রদের খুঁজতে গেছিলাম।' তাহলে ছাত্র কোথায় প্রশ্ন করা হলে বলেন, 'নিয়ে আসতেছি বলে মোটর সাইকেল নিয়ে ফের কোথায় যেন চলে গেলেন প্রায় ৩০ মিনিট পড়ে চারজন শিক্ষার্থী নিয়ে এলেন বিদ্যালয়ে।'
বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন বাড়ি কমল সরেন বলেন, 'এই স্কুলে তো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের গ্রামের কোনো বাচ্চারা পড়ালেখা করে না। কারণ স্কুলের শিক্ষকরা তো ঠিকমত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে না। আবার বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও বাচ্চাদের ঠিকমত ক্লাস নেয় না।'
সহকারী শিক্ষক সুমন চন্দ্র রায় বলেন, 'আমি গত বছর এ স্কুলে জয়েন করেছি। আমি চেষ্টা করছি এখানে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করাতে। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও পরে তারা স্কুলে আনে না। মাঝে সাঝে হোম ভিজিট করে তাদের স্কুলে নিয়ে আসা হয়।' বিদ্যালয়ের সভাপতি এরশাদুল ইসলাম বলেন, 'আমি নতুন সভাপতি হয়েছি এ স্কুলের এক বছর হলো। আমি প্রথমেই প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বদলির সুপারিশ করি কন্তিু তাদের বদলি না হওয়ায় আমি স্কুলটি ভালো করতে পারছি না।'
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার জন্য দায়ী আমাদের স্কুলে শিক্ষক সংকট। কাগজ-কলমে চারজন শিক্ষক থাকলেও সবসময় দুইজন শিক্ষক দিয়ে একটি বিদ্যালয় চলছে। প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন মিটিং ও স্কুলের কাজে প্রায়ই উপজেলায় যেতে হয়। আমরা চেষ্টা করছি হোম ভিজিট ও অভিভাবক সমাবেশ করে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য।'
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মনজুরুল ইসলাম বলেন, 'ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করে তিন দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'