ইতিহাস কোনো খন্ডিত বিষয় নয়, প্রকৃত ইতিহাস একটি জাতিকে মেধা ও প্রজ্ঞা সম্পন্ন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলা। এই উপজেলার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম বিশেষ আলাপচারিতায় জানিয়েছেন বিভিন্ন না জানা তথ্য। তিনি বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জনপদ আমাদের জন্মভূমি ধামইরহাট। অসংখ্য নদনদী খালবিল পরিবেষ্টিত শষ্য শ্যামলা কৃষি প্রধান এই এলাকা। প্রাচীনকালে কৃষিপণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল। কালের বিবর্তনে আদিকালের প্রমত্তা নদী (বর্তমানের ঘুকসী খাল) তীরবর্তী এই স্থানে হাটটি গড়ে উঠে। দূর-দূরান্ত থেকে বণিকের দল ছোট বড় নানা ধরনের নৌকায় রোববার দিনের সাপ্তাহিক এই হাটের ক্রেতাদের জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আসত। ব্যবসায়িক লেনদেন শেষে বণিকরা চাহিদামত হাজার হাজার মন ধান-চালসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য নিয়ে ফিরে যেত নিজ গন্তব্যে।
বলা বাহুল্য যে, উনিশ শতকের শেষ ভাগে সাঁওতাল বিদ্রোহের পর ইংরেজ সৈন্যদের ভয়ে বনজঙ্গলে পালিয়ে থাকা আদিবাসী মানুষরা জীবন-জীবিকার তাগিদে কৃষকের চাহিদা পূরণে বাঁশ ও বেতের ডালা, কুলা, চাঙারি, খইচালা, মাথল, ধামা, ডোল প্রভৃতি গৃহস্থালি উপকরণ তৈরিতে মনোনিবেশ করে কালক্রমে দক্ষ কারিগরের সুখ্যাতি অর্জন করে। অত্যন্ত সুন্দর ও মজবুত ধামা কিনতে দূর-দূরান্তের ক্রেতারা ভিড় জমাতো এই হাটে।
প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে দুই-চারটে ধামার প্রয়োজন পড়ত আর অন্য সব পণ্য লেনদেন করতেও ধামাই ছিল প্রধান অবলম্বন। এই ধামা কেনা-বেচার রোববার দিনের বিখ্যাত সাপ্তাহিক হাট থেকেই ধামইরহাট নামের উৎপত্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, 'অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, আমাদের উপজেলার নামের বিকৃত উচ্চারণ সবাইকে কম বেশি লজ্জিত ও বিব্রত করে। কিন্তু এ বিষয়ে দায়িত্ব্বশীল মহলের কোনো ভ্রম্নক্ষেপ নেই। এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে 'ধামা'কে সকার সামনে তুলে ধরা হোক।
উদাহরণ স্বরূপ সিঙ্গাপুরে জাতির পূর্বপুরুষরা ছিল দরিদ্র মৎস্যজীবী। তাদের অতীত ঐতিহ্যের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনকল্পে সিঙ্গাপুরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন ফটকে মৎস্যজীবীদের মাছের ঝুড়ি নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র তাদের দরিদ্র পূর্বপুরুষরা পেশা মৎস্যজীবীদের মাছের ঝুড়ি প্রদর্শন করে গর্বিত জাতির পরিচয় বহন করছে। আসুন আমরাও আমাদের ধামইরহাট নামের ঐতিহ্যের স্মারক ধামাকে স্বগৌরবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরি।'