মেহেরপুরের গাংনীতে উঠতি বয়সিদের হাতে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট থাকায় সহজেই অশ্লীল ও অনৈতিক ভিডিও দেখার সুযোগ অনায়াসেই পেয়ে যাচ্ছে তারা। ফলে লেখাপড়া ও কাজকর্ম ছেড়ে তারা জড়িয়ে যাচ্ছে নানা অপকর্মে। দলবেঁধে আড্ডা দেওয়া, মাদকসেবন, গ্রহণ, ইভটিজিং করাসহ নানা অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে তারা। পরিবারের অসচেতনতার কারণেই তারা বিপথগামী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। আর শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র পারিবারিক সচেতনতাই পারে তাদের সন্তানকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে।
বিভিন্ন এলাকায় অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালীন সময় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের কথা বলে স্মার্ট ফোন কেনার তাগিদ দেওয়া হয়। সে সময় শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন কিনে। অনলাইনে ক্লাসের চেয়ে তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ভিডিও গেমসহ নানা পর্ণো সাইটে প্রবেশ করে। সন্ধ্যার পর বাজারে, রাস্তার মোড়ে আড্ডা দেওয়া এবং গ্রামপাড়া মহলস্নায় তৈরি হচ্ছে তাদের একাধিক গ্রম্নপ। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং।
আধিপত্য নিয়েও বিরোধে জড়াতে দেখা যায় শিশু-কিশোরদের। এমনকি অপহরণ মুক্তিপণ আদায় বা মুক্তিপণের নাটক সাজাতেও তারা সিদ্ধহস্ত। যার প্রমাণ মিলছে বামন্দী বাজারে। গত ২ জুলাই দুই বন্ধু পলাশ ও আহসান হাবিব নিজেরাই অপহরণ নাটক সাজিয়ে মায়ের কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ভিডিও বার্তা পাঠায়। যদিও পুলিশ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দুইজনকে আটক করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। মোবাইলে ইন্টারনেট কেনার টাকা জোগাতে পরিবারের কাছে টাকা বা মূল্যবান জিনিস চুরি করতেও তারা পিছপা হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অনেক অভিভাবক আছেন, যারা তাদের শিশু সন্তানকে শান্ত রাখতে তার হাতে স্মার্টফোনে গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও চালিয়ে দিচ্ছেন। এতে ওই শিশুর মধ্যে এক ধরনের আসক্তি জন্মাচ্ছে।
বেশ কয়েকজন অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, 'মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার পর আর কেউ ঠিকমতো পড়ালেখা করে না। বিশেষ করে প্রবাসীর ছেলেমেয়েরা বেশি বেপরোয়া। এসব ছেলেমেয়ারা টিকটক, রিল করে মিডিয়াতে ছাড়ে। আবার অনেকেই অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুল আল মারুফ জানান, টিভি, গেম বা যেকোনো ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট দেখার সময় মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয়। এতে এক ধরনের ভালো লাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। ফলে অতিসহজেই শিশুরা এতে আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ছাড়াও পরিপূর্ণ মানুষিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ডিভাইস। তাই অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। তা নাহলে তাদের সন্তানরা যেমন শিক্ষা থেকে ঝরে পড়বে, তেমনি তারা আগামী দিনের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।