টাঙ্গাইলে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত বানভাসিরা

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পানির নিচে তলিয়ে আছে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর -যাযাদি
টাঙ্গাইলে প্রধান তিন নদীর পানি সামান্য কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং জেলার অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে প্রতিদিন পানি বাড়ছে। ফলে জেলার ৬টি উপজেলার ১২৩ গ্রামের বানভাসি মানুষ পানিবাহিত রোগের প্রকোপে ভুগছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ক্রমান্বয়ে শুকনা খাবারের সংকট তীব্র হচ্ছে। জেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়ে ধান, পাট, তিল ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এছাড়া প্রায় দেড় হাজার পুকুরের পাড় তলিয়ে মাছ বের হয়ে গেছে। বন্যার্তরা সরকারি-বেসরকারি সহায়তা কামনা করছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও তা অপ্রতুল। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝিনাই নদীর (নিউ ধলেশ্বরী) পানি জোকারচর পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ ফটিকজানি নদীর পানি নলছোপা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার এবং মধুপুর পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নদীগুলোয় পানি বাড়ার কারণে টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও বাসাইল উপজেলার ১২৩টি গ্রাম পস্নাবিত হয়ে বানভাসিদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বানভাসি এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রায় পরিবারেই ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগী রয়েছে। পানির কারণে তারা চিকিৎসা কেন্দ্রের যেতে পারছে না। এছাড়া এসব এলাকায় শুকনো খাবারের সংকটও ক্রমান্বয়ে তীব্র হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা অপ্রতুল। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ও গালা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এ দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। নৌকা ও কলা গাছের ভেলা ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। অধিকাংশ পরিবারে ডায়রিয়া-আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগী রয়েছে। কাজ না থাকায় অনেকেই বেকার হয়ে পড়ছেন। তলিয়ে গেছে ধান, পাট, তিল ও সবজি ক্ষেত। অনেকের পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। এ এলাকার অনেকেই গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়ছেন। ফৈলারঘোনা গ্রামের আফজাল হোসেন, লোকমান হোসেন ও গালা গ্রামের কৃষক ফজলুল হক জানান, বাড়ির চারদিকে পানি। নিজের মোটর সাইকেল অন্যের বাড়িতে রেখে যাতায়াত করতে হয়। সরকার থেকে তাদের গ্রাম কোনো সহযোগিতা পায়নি। নিম্ন আয়ের মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন। শিশু ও বয়ষ্করা নানা কারণে বেশি বিপাকে পড়ছেন। তারা জানান, কেউ নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। অনেকের ধান, পাট, তিলের বীজতলা তলিয়ে ক্ষতি হয়েছে। অনেকে ত্রাণ সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। তাদের এলাকায় সাধারণত সবজি চাষ বেশি হয়ে থাকে। ক্ষেতে পানি ওঠায় সবজিগুলো ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, প্রতিটি উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে জিআর চাল দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগদ অর্থ ও নৌকা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে- প্রয়োজন হলেই বিতরণ হবে।