বছরজুড়েই দ্রব্যমূল্যের উচ্চমুখিতায় হাঁসফাঁস করছে দেশের মানুষ। এতে মধ্যবিত্তের মুখে ঠিকঠাক দুমুঠো খাবার জুটলেও সবকিছু নাগালের বাইরে থাকায় অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে নিম্নবিত্তরা। নানা অজুহাতেই দেশের বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এবার টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাড়তি সেই দ্রব্যমূল্যের বাজারে যেন জোয়ার লেগেছে। চাল, ডাল, তৈল থেকে শুরু করে কাঁচা সবজির বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে সর্বোচ্চ।
ঈশ্বরদী উপজেলার বড় দুটি সবজির বাজার হচ্ছে- ঈশ্বরদী পৌর সবজির বাজার এবং দাশুড়িয়া বাজার। এ দুটি সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন রেকর্ড গড়ে কাঁচা মরিচের দাম হয়েছে প্রতি কেজি ৩শ' টাকা, করলা ১শ', লাউ (প্রতিটি) ৫০, পেঁপে ৫০, বরবটি ৭০, কচু ৭০, বেগুন ৮০, পটল ৪০, ধুন্দল ৫০, কুমড়া ৫০ টাকা (প্রতিটি), আলু ৫৫, পেঁয়াজ ১শ', রসুন ২শ' ২০, আদা ৩শ', ঝিঙা ৫০ এবং ঢেঁড়স ৪০ টাকা কেজি।
মাছের বাজারেও নেই ভালো খবর, ৬ পিসে কেজি ইলিশের কেজি এক হাজার থেকে শুরু, পাঙাস ২৫০, সিলভার ২২০, তেলাপিয়া ২৭০, ছোট রুই ২৮০ থেকে শুরু, ছোট চিংড়ি এক হাজার টাকা কেজি, গুঁড়া মাছ ৬শ' থেকে শুরু।
ঈশ্বরদী বাজারের সবজি বিক্রেতা সবুজ জানায়, বৃষ্টির কারণে বাজারে স্থানীয় সবজির আমদানিতে তেমন কোনো তারতম্য নেই। তবে কাঁচা মরিচ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানি করতে হয় বর্ষায়, এর দামটা একটু বেশি থাকে।
বাজার করতে আসা অটো চালক সবুজ বলেন, 'সারাদিন যা কামাই তা কাঁচা মরিচ আর পিঁয়াজ কিনতেই শেষ। পারিবারের জন্য চালডাল কিনব কী দিয়ে।'
দাশুড়িয়া সবজি বাজারে সবজির পসরা সাজিয়ে বসে থাকা বিক্রেতা নূর সালাম মিয়া বলেন, 'বর্ষায় সব সবজির দামই একটু বেশি থাকে। এবারও তাই। তাছাড়া আমরা বেশি দামে কিনছি কম দামে বিক্রি করা যাবে না। তবে দাম বেশি থাকায় অনেকেই দাম শুনেই ফেরত যাচ্ছে। কেউ দরদাম করছে কেউবা আবার চুপি সারেই ফিরে যাচ্ছে।'
বাজারের ব্যাগ হাতে এ দোকান থেকে ও দোকানে ছুটে বেড়ানো এক দিনমজুর বলেন, '৫০০ টাকা হাজিরায় দিনমজুরের কাজ করে ৮০ টাকা কেজি বেগুনের স্বাদ নেই কীভাবে। মরিচের ঝালে যে চোখ-মুখ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে! হাটে ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। আমরা কী কিনব, খাব কী বনের শাক পাতা খাব তার জন্যও তো কাঁচা মরিচ দরকার। সেটাও কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই।'
তবে বাজারে দোকানিরা সবজির পরসা সজিয়ে বসে থাকলেও উচ্চ মূল্যের কারণে ক্রেতাদের আনা-গোনা নেই বললেই চলে। নিতান্তই না পারা মানুষগুলো কেবল বেঁচে থাকতেই উচ্চ মূল্যের এই বাজারে আসছে। অনেকেই আবার স্বল্প আয়ের সংসারে ঠাঁই মেলাতেই হিমশিম খাচ্ছে।