সাতকানিয়ায় দ্রম্নত ছড়াচ্ছে লাম্পি স্কিন রোগ
অর্ধশতাধিক গরুর মৃতু্য
প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গবাদিপশুর মধ্যে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরো উপজেলায় ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক গবাদিপশুর মৃতু্য হয়েছে। রোগাক্রান্ত গবাদিপশু নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রতিদিন উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে ভিড় করছেন। স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের মাধ্যমেও চিকিৎসা করছেন অনেকে। প্রতিদিনই উপজেলার কোনো না কোনো এলাকায় নতুন নতুন গবাদিপশু এই রোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সাধারণত এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব, অস্বাভাবিক গরম ও মশা-মাছির বংশ বিস্তারের ফলে এই ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর মাংস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে জানা গেছে। এই রোগে আক্রান্ত গরু বা বাছুরের প্রথমে জ্বর দেখা দেয়। একপর্যায়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের পাশাপাশি মুখ ও নাক দিয়ে লালা ঝরে এবং পা ফুলে যায়। আক্রান্ত গবাদিপশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিন্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় ও ক্ষত সৃষ্টি হয়। কিডনির ওপর এই রোগের প্রভাব পড়ার ফলে গবাদিপশু মারাও যায়।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল আজহার পর থেকে সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তিন বছরের কম বয়সি গরুর বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তবে কিছু কিছু এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় গরুও আক্রান্ত হয়েছে।
বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, হঠাৎ করে তার একটি গরুর বাছুরের পুরো শরীর গুটা উঠে ভরে গিয়েছিল। এটি দেখার পর তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে জানতে পারেন, তার গরুর বাছুরটি লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রথমে স্থানীয় পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হলে রোগ সারেনি। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু পাহাড়ি ওষুধ খাওয়ানোর পর সারতে শুরু করে। তবে বাছুরটি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। একই রোগে আক্রান্ত অপর এক গরুর মালিক জানিয়েছেন, এলএসডি রোগাক্রান্ত গরু প্রথমদিকে জ্বরাক্রান্ত হয়ে ঘাস খাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে শরীরজুড়ে অসংখ্য গুটা দেখা যায়। এরপর থেকে গরু ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে।
উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ অফিসার (সম্প্রসারণ) শরৎ বড়ুয়া বলেন, 'কোয়াক ডাক্তাররা লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুকে ভুল চিকিৎসা প্রদান ও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করায় পশু মৃতু্যর হার বেড়েছে। এ ছাড়াও তারা গ্রামাঞ্চলে গরুর মালিক ও খামারিদের ভুল বুঝিয়ে সরকারি ভ্যাকসিনের পরিবর্তে বেসরকারি ভ্যাকসিন প্রয়োগের দিকে ধাবিত করছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছি।'
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে গবাদিপশুর মধ্যে এলএসডি রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই গরুর মালিক ও খামারিরা গরু নিয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করা হলে রোগ সেরে যাচ্ছে। তবে গরুর মালিক ও খামারিদের অবহেলায় বিলম্বে চিকিৎসা শুরু করার ফলে ইতোমধ্যে অনেক গরু মারা গেছে।'