জাতীয় দলের পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে বড় পরিকল্পনা বিসিবির। এরই অংশ হিসেবে শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাচ্ছে বিসিবির হাইপারফরম্যান্স ইউনিট (এইচপি দল)। টি২০ টুর্নামেন্টের পাশাপাশি সেখানে হবে ওয়ানডে এবং চার দিনের ম্যাচও। এবারের টুর্নামেন্ট হবে ৯ দলের, খেলবে পাকিস্তানসহ বিগ ব্যাশের দল।
টি২০ ও ওয়ানডে স্কোয়াডের খেলোয়াড়রা যাবেন পরে। আগামী ১৯ জুলাই থেকে পাকিস্তােেনর 'এ' দল পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষে প্রথম চার দিনের ম্যাচ খেলবে বিসিবির এইচপি স্কোয়াড। ২৬ জুলাই এই দুই দল খেলবে দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচ। ১ আগস্ট থেকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর ৯ আগস্ট একটি টি২০ টুর্নামেন্টে অংশ নেবে দলটি।
লম্বা এই সফরের শুরুটা দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ দিয়ে। এই সংস্করণেই শেখার জায়গাটা বেশি। ২০২৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেস্ট খেলার কথা বাংলাদেশ জাতীয় দলের। এর আগে শেখা ও অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ করার বড় সুযোগ দেখছেন জয়। চার দিনের ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া এই তরুণ ওপেনার এই সিরিজকে দেখছেন তাদের ক্যারিয়ারের বড় গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে, 'এটা আমাদের জন্য খুব বড় একটা সুযোগ, আমরা অস্ট্রেলিয়াতে যাচ্ছি। আমি বলব, এখানে যে গ্রম্নপটা আছি কারওরই অস্ট্রেলিয়া টু্যর করা হয়নি। এটা আমাদের প্রথম টু্যর, এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৭ সালে ওখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ আছে, ওটার জন্য খুব ভালো প্রস্তুতি হবে। অধিনায়ক হিসেবে আমাদের দলের যে সমন্বয় আছে, সিরিজ জেতার লক্ষ্যই থাকবে।'
সব দিক থেকে দলের সমন্বয় তাই ভালো দেখছেন জয়, 'ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে খেলেছি আমরা কয়েকজন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কয়েকজন আছে, জাতীয় দলের কয়েকজন আছে। ওই হিসাব করলে আমাদের সমন্বয় খুব ভালো হবে। আশা করি, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব।'
এই সফরেরর খেলোয়াড়দের মধ্যে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে তিনজনের। তবু আপাতত তাদের গায়ে চেপেছে হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) স্কোয়াডের জার্সি। লক্ষ্য একটাই, আগামীর পথচলায় নিজেদের আরও শাণিত করা। প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাওয়াকে তাই বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন মাহমুদুল হাসান জয়। এই সুযোগের পুরোটাই কাজে লাগাতে চান তারা।
জয় ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া সফরে বিসিবির এইচপি দলের শাহাদাত হোসেন দিপু ও সাদমান ইসলামের আছে টেস্টের অভিজ্ঞতা। এই তিনজনের সঙ্গে চার দিনের ম্যাচের সিরিজের জন্য বাকি যারা সুযোগ পেয়েছেন, প্রত্যেকেই ভীষণ প্রতিশ্রম্নতিশীল। বিসিবির নির্বাচক হান্নান সরকার জানিয়েছেন, 'এভাবে বললে আসলে অনেক কিছুই চিন্তা করা যেত। আমরা যখন তিন সিলেক্টর সিলেকশনে বসেছিলাম, এটা নিয়ে অনেক বিস্তারিত আলাপ করি, এরপর সিলেকশনটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এখানে সাদমান রেগুলার ম্যাচ খেলছে কিনা, সেটা আপনারা দেখবেন কতদিন গ্যাপে খেলেছে।'
'পাশাপাশি কন্ডিশনে যে সুযোগটা, সেটা আমরা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি আফিফের এটা দেখবেন রিসেন্ট পাস্টে সে, কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে দূরে রয়েছে। বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে গিয়েছিল কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি।'-যোগ করেন তিনি।
২০০৮ সালের পর অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশের যে কোনো পর্যায়ের দল। যা নিয়ে হান্নান বলছিলেন, 'এটা তো আমরা সবাই বিলিভ করি, নামটা প্রথমে যখন চিন্তা করি তখনই মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন। সে জায়গা থেকে এ ধরনের দলের পেস্নয়ারের সঙ্গে খেলার পাশাপাশি ওই কন্ডিশনে খেলা এটা ভালো একটা অভিজ্ঞতা, যেটা আমাদের খেলোয়াড়রা নিতে যাচ্ছে। একটা লম্বা সময় অপেক্ষার পরে ২০০৮ এ বাংলাদেশ দল শেষবার গিয়েছিল। আমি আশা করছি, অভিজ্ঞতাটা তাদের কাজে লাগবে।'
২০২২ সালের যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন রিপন মন্ডল। সেবার ভালো পারফর্ম করায় এরপর থেকেই রয়েছেন বিসিবির রাডারে। সবশেষ ঘোষিত বিসিবির এইচপি দলেও জায়গা হয় এই তরুণ অলরাউন্ডারের। এবার অস্ট্রেলিয়া সফরের দলেও আছেন।
দেশ ছাড়ার আগে রিপন জানিয়েছেন, 'আলহামদুলিলস্নাহ, এটা আমার জন্য প্রথম টু্যর। আমরা গিয়ে দেখি, কন্ডিশনটা কী? উইকেটে যদি হেল্প থাকে, কন্ডিশন অনুযায়ী যতটুকু ভালো করা যায়, আমরা চেষ্টা করব ইনশালস্নাহ ভালো করার। চেষ্টা করব উইকেট বুঝে বল করার।'
রিপন জানিয়েছেন, নিজের লক্ষ্যের কথা। ভালো পারফর্ম করে আসতে চান সবার নজরে। এই অলরাউন্ডার বলছিলেন, 'লক্ষ্য তো থাকবে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার। আমার মেইন ফোকাস হচ্ছে, ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা। ভালো পারফরম্যান্স করলে সুযোগ আসবেই। আমি চেষ্টা করব যে, বিগ ব্যাশ না ভেবে যে আমাদের টিম হিসেবে যাচ্ছি। আমি চাই, আমাদের দল যেন সর্বোচ্চ ভালো খেলে। যদি ভালো করতে পারি, তাহলে সবার নজরে আসব।' টিম ম্যানেজমেন্ট এবং ক্রিকেটারসহ ২৪ জনের বহর গেছে অস্ট্রেলিয়ায়। এই দলটা মূলত চার দিনের ম্যাচের জন্য।
বাংলাদেশ চার দিনের স্কোয়াড :সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয় (অধিনায়ক), পারভেজ হোসাইন ইমন, অমিত হাসান, শাহাদাত হোসাইন দিপু, আরিফুল ইসলাম, মহিদুল ইসলাম অংকন, রাকিবুল হাসান, শেখ পারভেজ রহমান জীবন, হাসান মুরাদ, রেজাউর রহমান রাজা, মুকিদুল ইসলাম, রিপন মন্ডল ও মারুফ মৃধা।
ওয়ানডে দল : তানজিদ হাসান তামিম, জিসান আলম, পারভেজ হোসেন ইমন, আফিফ হোসেন (অধিনায়ক), শামীম হোসেন পাটোয়ারি, আরিফুল ইসলাম, আকবর আলী, ওয়াসি সিদ্দিকী, রাকিবুল হাসান, শেখ পারভেজ রহমান জীবন, মাহফুজুর রহমান রাব্বি, আবু হায়দার রনি, মুকিদুল ইসলাম, রিপন মন্ডল এবং মারুফ মৃধা।
টি২০ দল : তানজিদ হাসান তামিম, জিসান আলম, পারভেজ হোসেন ইমন, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, আরিফুল ইসলাম, আকবর আলী (অধিনায়ক), ওয়াসি সিদ্দিকী, রাকিবুল হাসান, আলিস আল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান রাব্বি, আবু হায়দার রনি, মুকিদুল ইসলাম, রিপন মন্ডল এবং মারুফ মৃধা।