বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিল নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলাজুড়ে বিস্তৃত। চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় ৪৭টি নদী ও খাল। বর্ষায় চলনবিলে পানিতে টইটম্বুর থাকায় নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে চলনবিলের বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ভিড় জমায়। কিন্তু এই চলনবিলে বর্তমানে শুরু হয়েছে নৌকা ভ্রমণের নামে অশ্লীল নৃত্য, জুয়ার আসর এবং মাদক সেবন। বিপাকে পড়েছেন চলনবিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। প্রশাসনের টহল ও নজরদারি না থাকায় দিনের পর দিন অশ্লীল নৃত্য, মাদক, জুয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
শুক্রবার নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিলের বিলশা পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ২ শতাধিক নৌকায় উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে অশ্লীল নৃত্যে মেতে উঠেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কিশোর-যুবকরা। পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসা নারীদের দেখলেই করা হচ্ছে ইভটিজিং। নৌকার মধ্যেই প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গিতে নৃত্য পরিবেশন করছে নৌকায় থাকা কিশোর-যুবকরা। অনেক নৌকায় ভাড়াটে মেয়েদের নিয়েও অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নৌকায় এসব কর্মকান্ডের পাশাপাশি বসানো হয়েছে জুয়ার আসর। শুধু তাই নয়, চলনবিলে পস্নাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে নষ্ট হচ্ছে চলনবিলের জীববৈচিত্র্য।
চাটমোহর থেকে বিলশায় ঘুরতে আসা পর্যটক সানোয়ার হোসেন জানান, 'আমি আমার দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে ঘোরার জন্য এসেছিলাম। একটি নৌকা নিয়ে চলনবিলে ঘোরার সময় আমার স্ত্রী ও মেয়েদের দেখে উত্ত্যক্ত করতে থাকে নৌকা ভ্রমণে আসা যুবকরা। আমি খুবি বিব্রত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম।'
কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবা আক্তার জানান, 'আমরা পাঁচ বান্ধবী বিলশায় ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু ঘুরতে এসেই বিপদে পড়ে গিয়েছি। বিভিন্ন নৌকা থেকে আমাদের দেখে অশ্লীল বাক্য ও অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গি দিয়ে নৃত্য করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত টহল দেওয়া হলে হয়তো এমন নোংরামি কিছুটা হলেও কমবে। আমরা সুস্থ বিনোদনের জন্য চলনবিলে ঘুরতে আসতে পারব।'
এদিকে গত বৃহস্পতিবার চলনবিলসহ নদী দিয়ে উচ্চশব্দে গান পরিবেশন ও অশ্লীল নৃত্য বন্ধে গুরুদাসপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একজন চিকিৎসক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই চিকিৎসক জানান, তিনি সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। তার বাড়ি উপজেলার আনন্দনগর মহলস্নায় নদীর তীরবর্তী স্থানে। চলনবিলে প্রবেশ করতে হলে তার বাড়ির সামনের নদী দিয়েই নৌকাগুলোকে যেতে হয়। নৌকা ভ্রমণের নামে নৌকায় অসংখ্য সাউন্ড বক্স উঠিয়ে উচ্চশব্দে অশ্লীল গান ও অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করতে করতে যাওয়া হয়। মূলত এ থেকে প্রতিকার পেতেই তিনি অভিযোগ দিয়েছেন।'
গুরুদাসপুর থানার ওসি উজ্জ্বল হোসেন বলেন, 'চলনবিলের গুরুদাসপুর অংশে টহল পরিচালনার জন্য তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।'
এ বিষয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, 'চলনবিলের সার্বিক পরিবেশ বজায় রাখতে অতিদ্রম্নত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া নিয়মিত চলনবিলের সব পর্যটন কেন্দ্রে টহল পরিচালনার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'