নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মেঘনা নদীবেষ্টিত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জমি ও ঘরবাড়ি হারানোর ভয়ে দিন কাটছে এ ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের। এর আগে নদীতে সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। এমন ভাঙনরোধে আগাম কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করছেন এলাকার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সবচেয়ে দুর্গম ইউনিয়ন কালাপাহাড়িয়া। উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে ইউনিয়নটিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মেঘনা নদী। মেঘনার তীরঘেঁষা তিনটি গ্রাম মধ্যারচর, চরলক্ষ্ণীপুর ও বিবিরকান্দী ভাঙনের কবলে পড়েছে। কয়েক বছর ধরে মধ্যারচর ও চরলক্ষ্ণীপুর গ্রামের খুব কাছেই নদী থেকে বালু তোলায় অনেক আগে থেকেই গ্রাম দু'টি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এখনো প্রতিদিন কিছু কিছু অংশ ভাঙছে। এরই মধ্যে চরলক্ষ্ণীপুর নজরুল ইসলাম বাবু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্কুলটি ডেঙ্গুরকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পে সাময়িকভাবে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পটিও নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। তীর ভাঙতে ভাঙতে মধ্যারচরের গুদারাঘাট সংলগ্ন যাত্রী ছাউনিটির খুব কাছে চলে এসেছে নদী।
কালাপাহাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মহিতুল ইসলাম হিরু বলেন, কয়েক বছর ধরে তাদের গ্রাম ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদী থেকে ভলগেট দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। তারা প্রতিবাদ করেও ফল পাননি। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামেনি।
এ ইউনিয়নের চরলক্ষ্ণীপুর গ্রামের বাসিন্দা রুস্তম আলী জানান, চরলক্ষ্ণীপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাসহ গ্রামের লোকজন বেশ আতংকের মধ্যে রাত কাটাচ্ছেন। প্রতিদিনই মেঘনার ঢেউয়ে গ্রাম ভাঙছে। পানিপ্রবাহ বাড়ায় মেঘনা নদীতে বড় বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়।
মধ্যারচর গ্রামের শামসুল হক জানান, তিন মাস আগে তার বাড়িসহ ৩০ শতাংশ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই এলাকায় অন্যস্থানে বাড়িঘর তৈরি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ফাইজুল হক ডালিম জানান, অনেক দিন থেকেই মেঘনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েকটি গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়েছে। গ্রামের মানুষ আতংকে আছে। বিষয়টি তিনি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, মেঘনা নদীভাঙনের কারণে এ এলাকার মানুষ সবসময় উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনযাপন করেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। মেঘনায় ভাঙনরোধে নদীরক্ষা বাঁধসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণে জাতীয় সংসদের হুইপ ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। শিগগির কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, 'আমিও কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নে মেঘনার ভাঙনের বিষয়ে পাউবোর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা শিগগির ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নেবে।'