দীর্ঘসূত্রতার পর এখন গতি পেয়েছে পদ্মা সেতু-শরীয়তপুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর এপ্রোচ পর্যন্ত ৩টি প্যাকেজে সড়ক ও ব্রিজের উন্নয়ন কাজ চলছে। ৪ বছরেও সড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এ জেলার লাখ লাখ মানুষ। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা কেটে, এখন দ্রম্নতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে বলে দাবি করেছে সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী নাবিল হোসেন। এছাড়া শিগগিরই কোটাপাড়া ব্রিজটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শরীয়তপুর সড়ক ও পরিবহণ বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর নাওডোবা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য ২০২০ সালের মার্চে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। আর এ নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২৭ কিলোমিটার সড়কে ২টি প্যাকেজ এবং প্রেমতালা কোটাপাড়া ব্রিজ এবং কাজিরহাট ব্রিজ দুটি নিয়ে একটি প্যাকেজ মোট ৩টি প্যাকেজে ৩৩ ফুট প্রশস্ত দুই লেন সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এখনো। তবে ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে চার লেনের জন্য। সংশ্লিষ্টরা বলছে, কোভিড পরিস্থিতি, ভূমি অধিগ্রহণের নানা জটিলতা, অস্বাভাবিকভাবে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষকে।
শরীয়তপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ যোগদানের পর ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন তিনি। এতে অল্পসময়ের মধ্যেই এ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। অধিগ্রহণ জটিলতা কেটে যাওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ জাজিরা থেকে নাওডোবা পর্যন্ত নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে। এখন দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ।
এদিকে, যাত্রী ও গাড়ি চালকদের অভিযোগ, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সড়কটির বেহাল অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এছাড়া কীর্তিনাশা নদী ওপর নির্মিত প্রেমতালা কোটাপাড়া ব্রিজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাশেই ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুরাতন ব্রিজটি দিয়ে যানচলাচল অব্যাহত রয়েছে। এতে মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অটোচালক আব্দুর রহিম বলেন, 'কোটাপাড়া ব্রিজে উঠলে কলিজায় পানি থাকে না। ব্রিজ কাঁপতে থাকে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।'
আব্দুল হক, ওয়াসিম কাজী, জয়নাল ছৈয়ালসহ স্থানীয়রা জানায়, ব্রিজের কাজের গতি না থাকায় এত সময় লাগছে। কয়দিন কাজ করে আবার বন্ধ করে রাখে। এভাবেই সময় নষ্ট হয়েছে।
সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী নাবিল হোসেন বলেন, 'প্রেমতলা কোটাপাড়া ব্রিজ আর কাজিরহাট ব্রিজ নিয়ে একটি প্যাকেজে কাজ চলছে। প্রেমতলা কোটাপাড়ার পুরাতন ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন ব্রিজটি দ্রম্নত সময়ের মধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার চেষ্টা করছি। হয়তো আগামী মাসেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।'
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পদ্মা সেতু-শরীয়তপুর সংযোগ সড়কটি মনিটর করছি। অধিগ্রহণ নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে। এখন ঠিকাদাররা পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্রম্নত সময়ে আপনারা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাবেন।'