চিকিৎসক সংকট, নেই অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাঁচ বছর ধরে বন্ধ অপারেশন
কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত গাংনীবাসী
প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সেটির একটি আধুনিক ভবন নির্মিত হলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এখানে আধুনিক ও সুসজ্জিত অপারেশন থিয়েটার থাকলেও অপারেশন বন্ধ পাঁচ বছর ধরে। এক্স-রে মেশিন থাকলেও ফিল্ম নেই। জেনারেটরটিও চালু হয়নি। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি বন্ধ দুই মাস ধরে। তবে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, সব সংকট কাটিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে মোট ডাক্তারের পদ ৩০টি। বিশেষজ্ঞ পদ পূরণ হয়নি দীর্ঘদিনেও। স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটিতে ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মোট ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এ হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র ১১ জন। যদিও খাতা-কলমে দায়িত্ব পালন করছেন ১২ জন।
জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জিক্যাল) একজন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ডেপুটিশনে রয়েছেন। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের পদটি শূন্য স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জন্মলগ্ন থেকে। ইনডোর ও আউটডোর সেবাটি সেকমো (সাব-অ্যাসিস্ট্যান্স কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) ও সাব-সেন্টারের চিকিৎসক দিয়ে চালানো হচ্ছে। তবে নার্স সংকটটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। সব ধরনের অপারেশন করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া একটি সুসজ্জিত রুম। দেওয়া হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। সার্বক্ষণিক বিদু্যতের ব্যবস্থার জন্য রয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি জেনারেটর। আছে প্রশিক্ষিত নার্স। স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের কয়েকজন ডাক্তার বাইরের ক্লিনিকে অপারেশন করেন। অথচ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটিতে তাদের দিয়ে অপারেশন করানো হয় না। এদের দিয়ে অপারেশন করানোর কোনো অনুমতি নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর ফায়দা লুটছে বিভিন্ন ক্লিনিক।
একটি সূত্র জানায়, অনেক ভালো ডাক্তার বদলি হয়ে এসেছিলেন এখানকার লোকজনকে সেবা দিতে। কিন্তু এখানকার কতিপয় ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন না করার জন্য হুমকি দেওয়া ছাড়াও মারধর করার কারণে ডাক্তাররা থাকতে চাননি। বর্তমানে ডাক্তার সংকট রয়েছে। অপারেশন না করায় যেমন গরিব অসহায় রোগীদের অর্থদন্ড হচ্ছে, তেমনি ফায়দা লুটছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
এ উপজেলার কুঞ্জনগরের হামিদুল জানান, তার স্ত্রীর নার্গিসের সিজারিয়ান অপারেশ করা হয়েছে গাংনী রবিউল ক্লিনিকে। স্বল্প আয়ের মানুষ অথচ খরচ করতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটিতে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হলে কোনো অর্থ খরচ হতো না। একই কথা জানান মিনাপাড়ার আজিবুল। তার স্ত্রীকে সিজারিয়ান অপারেশন করান রাজা ক্লিনিকে। এখানে ওষুধ বেড ভাড়া আর ডাক্তার বাবদ খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা।
এক্স-রে মেশিনটি চালু করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে ফিল্ম নেই। নেই অপারেটর ও জেনারেটরের ব্যবস্থা। বিদু্যৎ চলে গেলে ওটি এবং ওয়ার্ড থাকে অন্ধকারে। হারিকেন থাকলেও তেলের বরাদ্দ না থাকায় তা জ্বালানো হয় না। স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স চত্বরে কোনো আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর বসে মাদকের আখড়া। ওয়ার্ডে রোগীদের বিছানার চাদর ময়লা ও ছেঁড়া। ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসামগ্রী না থাকায় টয়লেট ও ফ্লোর দুর্গন্ধ।
এদিকে অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি বন্ধ রয়েছে দুই মাস ধরে। তেলপাম্পে আড়াই লাখ টাকা বকেয়া থাকায় পাম্প কর্তৃপক্ষ আর তেল দিচ্ছে না। ফলে এ সেবাটি বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি বা গুরুতর রোগীকে কোথাও নিতে হলে বাইরে থেকে চড়া দামে ভাড়া নিতে হচ্ছে। এতে আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগী সাধারণ।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী জানান, ইতোমধ্যে তিনি ডাক্তার সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অপারেশন করাতে হলে সরকারি কিছু নিয়ম রয়েছে। বাইরে যে চিকিৎসক অপারেশন করেন তাতে কোনো বাধা না থাকলেও সরকারি নিয়মে সেটি রয়েছে। ডাক্তার সংকট কাটিয়ে উঠলে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।