আজকের যায়যায়দিন

পাহাড়ি ঢল ও হাওড়ের ঢেউয়ে ভেঙেছে সড়ক। ভাঙাচোরা সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে বেড়েছে ভোগান্তি। ভোগান্তি নিয়ে পথ চলতে হবে আগামী শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত। এমনটাই জানাল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তাহিরপুর কর্তৃপক্ষ।

সাম্প্রতিক সময়ের দুই দফা বন্যায় সীমান্তের বিভিন্ন নদী ও নালা দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামে সেই সঙ্গে বিভিন্ন হাওড়ের ঢেউয়ে তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এলজিইডির সংযোগ সড়কের মধ্যে ৩৬ কিলোমিটার সড়ক স্থানে স্থানে ভেঙে যায়। বর্তমানে ভেঙে যাওয়া ও খানাখন্দ হওয়া সড়কে পথ চলতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যেমন ভোগান্তিতে পড়েছে, তেমনি হেঁটে চলাচল করতে গিয়েও অনেকেই পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে।

সরেজমিন তাহিরপুর উপজেলার একাধিক সড়কে গিয়ে দেখা যায় সড়কের বন্যার চিহ্ন লেগে আছে। সীমান্ত সড়ক বারেকঠিলা হতে বীরেন্দ্র নগর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে চানপুর, রজনী লাইন, লাকমা, লালঘাট, বাগলি চড়া দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি সড়ক উপচে পড়ে পানির স্রোতে সড়কের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার সড়কের কোনো কোনো স্থান ভেঙে গেছে। কোনো স্থানে সড়কের বিটুমিন উঠে গেছে।

তাহিরপুর বাদাঘাট ১৫ কিলোমিটার সড়কে তাহিরপুর সদর সূর্যেরগাঁও থেকে পাতারগাঁও পর্যন্ত স্থান দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে ও মাটিয়ান হাওড়ের ঢেউয়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক স্থানে স্থানে ভেঙে গেছে। আনোয়ারপুর বালিজুরী সড়কে আনোয়ারপুর ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে বালিজুরী পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কে বিভিন্ন স্থান দিয়ে জাদুকাটা নদীর পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে ১ কিলোমিটারের মতো সড়কের বিটুমিন উঠে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে গোবিন্দ্রশ্রী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে শনি ও মাটিয়ান হাওড়ের ঢেউয়ে ভাটি তাহিরপুর ও ঠাকুরহাটি গ্রামের সামনে ১ কিলোমিটারের মতো পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। কাউকান্দি বাজার থেকে বালিয়াঘাট নতুন বাজার হয়ে শ্রীপুর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে কামাড়কান্দি গ্রামের সামনে, খলিসাজুড়ি গ্রাম থেকে বালিয়াঘাট নতুন হাটি পর্যন্ত ও বালিয়াঘাট গ্রামের পশ্চিম থেকে শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়ক একাধিক স্থানে পাহাড়ি ঢল ও মাটিয়ান হাওড়ের ঢেউয়ে ভেঙে গেছে। বর্তমানে এ ভাঙাচোরা সড়ক পথগুলো দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী ও সর্বসাধারণ পথ চলতে গিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন।

কামাড়কান্দি গ্রামের কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক মোস্তাক আহমেদ জানান, ব্যবসার কাজে প্রায়ই তিনি সুনামগঞ্জ, ট্যাকেরঘাট, বড়ছাড়া যাতায়াত করেন সড়ক পথে। কিন্তু বন্যার সময় পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে একাধিক সড়ক পথ ভেঙে গেছে।

বাগলি বারেক টিলা ও ট্যাকেরঘাট এলাকায় ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে হাওড় ঘুরতে এসে টু্যরিস্টরা রাত্রি যাপন করেন ট্যাকেরঘাটে। সেখান থেকে মোটর সাইকেল কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোতে করে তারা লালঘাট চড়া, লাকমা চড়া, বারেকঠিলা, যাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগান ঘুরতে যান। গত কয়েকদিন আগে বন্যার সময় মেঘালয় পাহাড়ের ঢলের পানি নেমে এ সড়ক পথে অনেক স্থান ভেঙে যাওয়ায় তাদের এ পথে বাইক চালাতে গিয়ে একদিকে যেমন কষ্ঠ হচ্ছে, অন্য দিকে সময়ও লাগছে দ্বিগুণ।

ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওড় ও ট্যাকেরঘাট ঘুরতে আসা পর্যটক আল আমীন বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে তাহিরপুরের সীমান্ত সড়কটি অনেক স্থানে ভেঙে যাওয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের সীমান্ত এলাকার চড়া ও নালাগুলো দেখতে গিয়ে ভোগান্তি বেড়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আরিফ উলস্ন্যা খান বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় উপজেলায় ৩৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর কিছু অংশ এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ইচ্ছে করলেও বর্ষাকালে সংস্কার করা সম্ভব না।