শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
অস্ট্রেলিয়ার কথা বলে মুক্তিপণ আদায়

আড়াইহাজারে মানব পাচার মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:২২
আড়াইহাজারে মানব পাচার মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের চার যুবককে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে ভারত ও শ্রীলংকায় আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে ৭৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে দেশে ফিরে আসার পর প্রতারক দালালচক্রের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী হাসিবুল হোসাইনের বাবা মোবারক হোসেন। কিন্তু ধৃর্ত প্রতারকচক্র রয়েছে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দিচ্ছে বলে মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাঁচরুখী এলাকার মোবারক হোসেন মোলস্নার ছেলে হাসিবুল হোসাইন, কাউসারের ছেলে হানিফ, স্বপনের ছেলে আ. আহাদ এবং শামীমের ছেলে সাকিবকে অস্ট্রেলিয়া নেওয়ার কথা বলে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের বি-বস্নকের চার নম্বর সড়কের ৭৪ নম্বর পস্নটের স্বপ্নখেয়া ভবনের বাসিন্দা মলিস্নক রেজাউল হক সেলিম ও তার সহযোগীরা তাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেন। পরে ২০২৩ সালের ২৬ মে হাসিবুল হোসাইনসহ আরও তিনজনকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানের কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। প্রতারকচক্র ভিকটিমদের ভারতের চেন্নাই নিয়ে টর্চার সেলে আটকে রেখে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। পরে তাদের আবার চেন্নাই থেকে অস্ট্রেলিয়া নেওয়ার কথা বলে শ্রীলংকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে আবার তাদের রাখা হয় প্রতারকচক্রের নির্ধারিত টর্চারসেলে। সেখানে দ্বিতীয় দফায় ভিকটিমদের আটকে রেখে নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়। পরে মুক্তিপণ পাওয়ার পর ভিকটিমদের ছেড়ে দিলে শ্রীলংকার পুলিশের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ভিকটিমরা দেশে আসার পর মামলার বাদী ভিকটিম হাসিবুল হোসাইনের বাবা মোবারক হোসেন গত ৩ মে মামলার চয় নম্বর বিবাদী ইকবালের ভূলতা গাউছিয়া এলাকার বাড়িতে এক সমঝোতা বৈঠক বসেন। বৈঠকে প্রতারকচক্র মোবারক হোসেনকে ভিকটিমদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন। এ বিষয়ে মোবারক হোসেন বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ মানব পাচার ট্রাইবু্যনালে গত ১৬ মে মলিস্নক রেজাউল হক সেলিম, তার স্ত্রী বিউটি এবং মেয়ে সূচিসহ যাদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছে, তাদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন, যা আদালতের নির্দেশে আড়াইহাজার থানায় রেকর্ড করা হয়। কিন্তু মামলা হওয়ার পর প্রায় দুই মাস পার হলেও পুলিশ প্রধান আসামি মলিস্নক রেজাউল হক সেলিমকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

মামলার বাদী মোবারক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, মামলাটির তদন্তের অগ্রগতির ক্ষেত্রে পুলিশ গাফিলতি করছে। তারা আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও তেমন তৎপরতা দেখাচ্ছেন না। এদিকে মামলার আসামি ইকবাল মামলা তুলে নিতে মামলার বাদীকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান বাদী মোবারক হোসেন। মামলা তুলে নিতে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আড়াইহাজার থানার এসআই রিপন জানান, মামলা গ্রহণের পর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রধান আসামিসহ বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া মামলাটি সিআইডির সিডিউলভুক্ত হওয়ায় এর তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে