সুন্দরগঞ্জে একই কলেজে ২ অধ্যক্ষ! প্রশাসন নীরব
প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ধর্মপুর আব্দুল জব্বার ডিগ্রি কলেজে সরদার মো. মিজানুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধর্মপুর আব্দুল জব্বার কলেজ কেন্দ্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপরজন বরখাস্ত অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম ফরম ফিলাপ ও ভর্তি সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করে অর্থ আদায় করছেন। ফলে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীরা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলামের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক অভিযোগের সত্যতা পায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তার এমপিও স্থগিত করে। এ দিকে অনিয়ম দুর্নীতি নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ ছামিউল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অত্র কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) নির্দেশ দেয়। সে মোতাবেক ইউএনও (সভাপতি) ওই বছরের ২ এপ্রিল/২০২৩ অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এ বিষয়ে বরখাস্ত অধ্যক্ষ হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে কোনো আদেশ পাননি। পরে একই বিষয়ে যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত গাইবান্ধায় একটি মামলা করেন। যার নম্বর ০৪/২০২৩। পরে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। আবার একই বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন, যার নম্বর অন্য ২৮৩/২০২৩। মামলাটি চলমান রয়েছে।
অপরদিকে বরখাস্ত হওয়ার ৪ পর ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখা, গাইবান্ধা হতে তথ্য গোপন করে কলেজ নামীয় হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। বরখাস্ত অধ্যক্ষের কলেজের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ গাইবান্ধা সদর থানা আমলি আদালত আরেকটি মামলা করে, যার নম্বর সিআর ৮২২/২৩। এই মামলায় সিআইডি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। বরখাস্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইবু্যনাল আদালত রংপুরে একটি মামলা চলমান রয়েছে। যার নম্বর সিটি ১৪৩/২০২২।
এ রকম মুহূর্তে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কলেজ বন্ধ থাকা অবস্থায় লোকবল নিয়ে কলেজ গেটের তালা ভেঙ্গে অনুপ্রবেশ করেন বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ ছমিউল। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি মামলা দায়ের করে, যার নম্বর জিআর ১৩০/২৪ (সুদরগঞ্জ)। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সরদার মো. মিজানুর রহমান, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, সকল দাপ্তরিক কার্যক্রমসহ এইচএসসি ২০২৪ ধর্মপুর আব্দুল জব্বার কলেজ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। অপর দিকে ছামিউল ইসলাম নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে চলতি বছরের ৩০ জুন পরীক্ষা কেন্দ্রে লোকবলসহ অধ্যক্ষ কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন যার নং সিআর ৩৯২/২৪।
ছামিউল ইসলাম বলেন, 'আমি এই কলেজের অধ্যক্ষ। বৈধতার বিষয় প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সদুত্তোর দেননি।' ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সরদার মিজানুর রহমান জানান, '২৮ জুন জেলা জজকোর্ট গাইবান্ধার সহকারী কৌশুলীর (জিপি) মতামত অনুযায়ী বরখাস্ত অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। বরখাস্ত অধ্যক্ষ ডিগ্রি (পাস) ১ম বর্ষ ভর্তি ও ৩য় বর্ষ ফরম পূরণে ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একই কলেজে দুইজন দায়িত্ব পালন করতে পারে এটি আমার বোধগম্যতায় আসে না। এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুন্দরগঞ্জ ও জেলা প্রশাসক গাইবান্ধাকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।' সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন-বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।