বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে গঠিত। যার আয়তন ৪৩৭ বর্গমাইল, বৃহৎ এই উপজেলায় প্রায় ৪ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এই উপজেলায় গত ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে সাব-রেজিস্ট্রার না থাকার ফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দাতা গ্রহীতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
নদী তীরবর্তী এই উপজেলায় দলিল করার জন্য প্রতিদিনের যাতায়াতে এই ভোগান্তি যেন লাগামহীন। জমি বিক্রির টাকা না পাওয়ায় অনেকের আটকে আছে বিদেশ যাত্রা, অনেকের ইমারত নির্মাণ। এ নিয়ে স্থানীয়রা পড়েছেন জটিলতায়।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মোরেলগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্টার তন্ময় কুমার মন্ডল এ বছরের ১ জুন থেকে ২ মাসের ডিপাটমেল্টাল প্রশিক্ষণে রয়েছেন। এ বছরের এপ্রিল মাসর ২৮ তারিখে তার প্রশিক্ষণের অর্ডার হয়েছিল। এরপর থেকে পাশ্ববর্তী মোংলা উপজেলার সাব- রেজিস্ট্রার স্বপন কুমার দে এখানে সপ্তাহে কখনো ১ দিন আবার কোনো সপ্তাহে একেবারেই আসেননি। রেজিস্ট্রি না হওয়ায় শত শত জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলনকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। পাশাপাশি সরকার প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
গত এপ্রিল মাস থেকে মোরেলগঞ্জে জমি রেজিস্ট্রি কমে গিয়েছে। অফিসে নেই তেমন দাতা ও গ্রহীতার আনাগোনা। লঞ্চঘাটের মহুরিপর্টির চেম্বারে বেশিরভাগ সময় খালি পড়ে থাকতে দেখা যায় চেয়ার-টেবিল। বর্তমান এমনই চিত্র মোরেলগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের। এদিকে নিয়মিত বদলির অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণে থাকা সাব-রেজিস্ট্রার তন্ময় মন্ডল অনত্র বদলি হয়েছেন।
মোরেলগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানায়, 'স্বাভাবিক সময়ে এই উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে মাসে ৪০০-৬০০ দলিল রেজিস্ট্রি হয়। এতে মাসে ৩-৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়ে থাকে সরকারের।
উপজেলার পুটিখালী ইউনিয়ন থেকে আসা একজন সেবাপ্রত্যাশী বলেন, 'দলিল করতে এসে দেখি কোনো কর্মকর্তা নেই। কয়েকবার এসেও দলিল করতে পারি নাই।'
খুলনা থেকে আসা একজন গ্রহীতা জানান, 'মোংলার সাব-রেজিস্ট্রার আসবে শুনে সকাল ১০টার সময় এসে বসে আছি। এখন বলতেছে সাব-রেজিস্ট্রার আসবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দলিল লেখক এ প্রতিবেদককে বলেন, 'নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রারের অভাবে দলিল করতে না পারায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। যদি নিয়মিত অফিসার পাওয়া যায়, তাহলে কাজের গতি বাড়বে।'
মোরেলগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত একজন বলেন, 'নতুন অফিসার দেওয়ার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, সমাধান হবে শিগগিরই। স্থায়ীভাবে একজন কর্মকর্তা ছাড়া অফিস চালানো মুশকিল। তাই দ্রম্নতই সাব-রেজিস্ট্রার দরকার।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা রেজিস্ট্রার রুহুল কুদ্দুস বলেন, মোরেলগঞ্জে নতুন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। হয়তো দ্রম্নত সমাধান হবে।