সারিয়াকান্দিতে অবাধে চলছে 'বৈদু্যতিক শকে' মাছ শিকার

হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার সারিয়াকান্দির বাঙ্গালী নদীতে বৈদু্যতিক ফাঁদ নিয়ে মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলে -যাযাদি
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙালি নদীতে অবাধে বৈদু্যতিক শক দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ জেলেরা। বৈদু্যতিক শক দিয়ে মাছ মারার কারণে শুধু মাছ নয়, নদীতে থাকা কাঁকড়া, ব্যাঙ, ছোট জলজ প্রাণী মারা যায়। ফলে যমুনা ও নদীতে বাঙালি নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এতে দুটি নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যমুনা ও বাঙালি নদীতে ছোট-বড় মিলে মোট ৮৪৭ টন মাছ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে সেই উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে ৫৮৭ টনে এসে ঠেকেছে। স্থানীয় জেলেরা বলছেন, বৈদু্যতিক শক দিয়ে মাছ শিকারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যমুনা ও বাঙালি নদীতে জাল ফেলে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা অবিলম্বে অবৈধ এ মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বৈদু্যতিক শক দিয়ে মাছ শিকারিদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও হচ্ছে না। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে যমুনা এবং বাঙালি নদী বয়ে গেছে। উভয় নদীর মধ্যে দূরত্ব দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার। তবে উপজেলার তিতপরল ও দেবডাঙ্গা এলাকাসহ কোনো কোনো স্থানে এর ব্যবধান ৫০০ মিটারেরও কম। বড় নদী হওয়ায় যমুনায় সারা বছর মাছ পাওয়া গেলেও ছোট নদী বাঙালিতে শুধু বর্ষাকাল কিংবা বৃষ্টিতে যখন পানি বাড়ে তখনই মাছ পাওয়া যায়। সরেজমিন, সারিয়াকান্দি কাজলা চরের দক্ষিণ টেংরা কুরায় গেলে এরশাদ নামের এক মাছ শিকারির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বৈদু্যতিক শক দিয়ে তিনি ৬ মাস ধরে মাছ মারছেন। এর আগে সে জাল দিয়ে মাছ শিকার করতেন। এখানে আরও ১০ থেকে ১২টি নৌকা আছে যে জেলেরা এরকম বৈদু্যতিক শক দিয়ে মাছ মারে। কাজলা ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার আনিস মোলস্না বলেন, 'আমি নিজেও বৈদু্যতিক শক দিয়ে মাছ মারি। এটা কোনো ব্যাপার না, এখানে অনেকেই এভাবে মাছ মারে।' সারিয়াকান্দি উপজেলার ধাপ গ্রামের ছাত্র ফরহাদ জানান, 'প্রায় ২ বছর আগে রাতে বাড়ি থেকে একটু দূরে দেবডাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখি দুজন নৌকায় বসে নতুন এক পদ্ধতিতে মাছ শিকার করছেন। কৌতূহলবসত তাদের নৌকার কাছে গিয়ে দেখতে পাই ইজিবাইকে ব্যবহৃত ব্যাটারির সঙ্গে একটি ইনভার্টার যুক্ত করে বিদু্যৎপ্রবাহ তৈরি করা হয়েছে। সেই ইনভার্টার থেকে দুটি তার বের করে একটি পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে আর অন্যটি একটি জালির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বিদু্যতায়িত ওই জালি যখন নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে, তখন ৫ থেকে ৭ ফুট দূরত্বের মধ্যে থাকা মাছগুলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেসে উঠছে। ভেসে ওঠা মাছগুলো পরে জালি দিয়ে নৌকায় তোলা হচ্ছে। ওই পদ্ধতিতে মাছ শিকারের সময় আমি কয়েকটি ব্যাঙ, কাঁকরা ও একটি সাপকেও ভেসে উঠতে দেখলাম।' সারিয়াকান্দির যমুনা তীরবর্তী মথুরাপাড়া এলাকার স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈদু্যতিক শক দিয়ে মাছ শিকারিরা যমুনা নদীতেও বেশ তৎপর। ওই প্রক্রিয়ায় যারা মাছ শিকার করেন তাদের স্থানীয় জেলেরা 'কারেন্ট জ্যালা' নামে ডাকেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ বলেন, 'যমুনা ও বাঙালি নদীতে বৈদু্যতিক শক দিয়ে মাছ শিকারের তথ্যটি পেয়েছি। কিন্তু তারা গভীর রাতে নদীতে নামেন বলে অনেক চেষ্টা করেও ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাদের ধরতে চেষ্টা চলছে। এমনকি তাদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনগণকেও সচেতন করা হয়েছে।'