ডুমুরিয়ায় সন্ত্রাসীর গুলিতে চেয়ারম্যান খুন
তিন জেলায় ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার পানিতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্য
প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
খুলনার ডুমুরিয়ায় সন্ত্রাসীর গুলিতে ইউপি চেয়ারম্যান খুন হয়েছেন। অপরদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও নোয়াখালীর সুবর্ণচরে কৃষক ও বৃদ্ধকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও রাঙামাটি নানিয়ারচরে পানিতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্য হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
খুলনা ও ডুমুরিয়া প্রতিনিধি জানান, খুলনার জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম (৪২) দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে বাড়িতে যাওয়ার পথে ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় নামক স্থানে তাকে গুলি করা হয়। জানা গেছে, শনিবার বিকালে ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। রাত ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলা সদর থেকে একা মোটর সাইকেলযোগে খুলনার বাসায় ফিরছিলেন। পথে গুটুদিয়া ওয়াপদার ব্রিজের পূর্ব পাশে পৌঁছলে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তিনটি গুলি তার পিঠে লাগে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই পড়ে যান। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা মোটর সাইকেলে দ্রম্নত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করে। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে গুলিবিদ্ধ রবিউল ইসলামকে দ্রম্নত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ছিলেন থানা অফিসার ইনচার্জ সুকান্ত সাহাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান পিপিএম (বার) জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশ অত্যন্ত সক্ষম এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ভাঙ্গায় স্বর্ণা আক্তার (১৮) নামের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে ভাঙ্গা থানা পুলিশ। রোববার বেলা ১১টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের বিলভরা গ্রামের মেয়েটির বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। মেয়েটির মরদেহ বসতঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলন্ত ছিল। সে ওই গ্রামের শেখ কবির হোসেনের মেয়ে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে স্বর্ণা আক্তারকে নিজ শয়নকক্ষে গলায় ওড়না দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় তার পরিবারের সদস্যরা। পরে ভাঙ্গা থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। স্বর্ণা আক্তার দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিল। ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের বিলভরা গ্রাম থেকে এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আলমগীর হোসেন (২৮) নামে এক কৃষককে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের মাঠ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, তা রোববার পর্যন্ত জানতে পারেনি পুলিশ বা স্থানীয়রা। নিহত আলমগীর উপজেলার শাহপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন আনুর ছেলে। শনিবার দুপুরের পর গ্রামের মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিল। পরে রাত পর্যন্ত বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে যায়। মাঠে গিয়ে দেখা যায়, তার গলাকাটা মৃতদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। নিহত আলমগীরের ১৪ বছরের একটি মেয়ে ও পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। কালীগঞ্জ থানার ওসি আবু আজিফ হত্যাকান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে রাতেই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রোববার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, সুবর্ণচরে আব্দুল খালেক খাজা (৭৫) নামে এক বৃদ্ধকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতের স্বজনরা তাৎক্ষণিক হত্যাকান্ডের কোনো কারণ জানাতে পারেনি। নিহত আব্দুল খালেক খাজা উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের চররশিদ গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি পাঁচ সন্তানের জনক ছিলেন। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় দিকে উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের চররশিদ গ্রামের নিহতের নিজ বাড়ির দরজা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে চরজব্বর থানা পুলিশ। শনিবার রাত ৯টার দিকে তিনি স্থানীয় কাঞ্চন বাজার থেকে বাড়ির পাশে এক প্রতিবেশীসহ একসঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হন। তার প্রতিবেশী তাকে তার বাড়ির দরজায় রেখে নিজ বাড়িতে চলে যান। কিন্তু তিনি আর ঘরে আসেননি। পরে তার স্ত্রী রোববার সকালে ফজর নামাজ পড়তে উঠে স্বামীকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে সকাল ৬টার দিকে নিজ বাড়ির সামনে স্বামী খাজা মিয়ার গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এ ঘটনায় চরজব্বর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কাওসার আলম ভূঁইয়া বলেন, বৃদ্ধকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তবে শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়নি। পুলিশ সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাঁতরে নদী পার হতে গিয়ে পানির স্রোতের সঙ্গে ভেসে যায় আবির (১৫) নামে শম্ভুপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র। পরে ডুবুরিরা তার লাশ উদ্ধার করে। সে উপজেলার উচিৎপুরা ইউনিয়নের রায়পুরা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী উজ্জ্বলের ছেলে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, আবির নদী পারাপারের জন্য পাকা ব্রিজ থাকা সত্যেও স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাঁতরে হাড়িধোওয়া নদী পার হতে যায়। এ সময় প্রবল স্রোতের সঙ্গে সে ভেসে যায়। স্থানীয়রা অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে ডুবুরি দলকে সংবাদ দেন। পরে নারায়ণগঞ্জ থেকে ডুবুরি দল এসে ঘটনাস্থল হতে অনেকটা দূর থেকে আবিরের লাশ উদ্ধার করে।
নানিয়ারচর (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটি নানিয়ারচর উপজেলার শিক্ষার্থী উসখেন চাকমা (১৩) গোলসাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে নৌকা দিয়ে লেক পার হওয়ার সময় পানিতে ডুবে মারা যায়। মৃত শিক্ষার্থীর মামা শান্তি জীবন তালুকদার জানান, আমার ভাগনে গোলসাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। সাঁতার না জানায় এমনটি হয়েছে, সে গোলসাছড়ি এলাকার সুবরন চাকমার পুত্র উসখেন চাকমা (১৩)। এ বিষয়ে নানিয়ারচর থানার ওসি তদন্ত কাজী আরিফ উদ্দিন জানান, শিশুর পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বিকাল ৩-৫০ ঘটিকায় শিশুটিকে উদ্ধার করে নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।