লাম্পি স্কিন রোগে কতগুলো গরু মারা গেছে জানে না নীলফামারী প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আক্রান্তের সংখ্যা কত তাও জানে না তারা। নেই এর প্রতিষেধক টিকার ব্যবস্থা। জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগের প্রাদুর্ভাব। আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার গরু। কপালে ভাঁজ পড়েছে মালিক ও প্রান্তিক খামারিদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ যাবৎ কতগুলো গরুর মৃতু্য হয়েছে তাদের কাছে পরিসংখ্যান নেই। ওই কার্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় ষাঁড়, গাভী ও বলদসহ ৭৫ হাজার ৩৮৩ গরু রয়েছে। প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, শতকরা তিন থেকে চারটি গরু এই রোগে মৃতু্য হয়েছে। সেই হিসেবে ছয় উপজেলায় দুই হাজারের ওপর গরুর মৃতু্য হয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। তারপরও প্রাণিসম্পদ বিভাগের নেই কোনো মাথাব্যথা।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন গ্রামে এ রোগে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে কারও না কারওর গরু। আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা করেও সুফল পাচ্ছেন না কৃষক। পশু হাসপাতাল ও স্থানীয় বাজারে মিলছে না প্রতিষেধক টিকা এবং ওষুধ।
জেলা শহরের ডালপট্টি রোডের ওষুধ ব্যবসায়ী (ভেটেরিনারি) ইকবাল আহমেদ জানান, 'এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের ওষুধ কোম্পানি লাম্পি স্কিন ভাইরাসের কোনো ওষুধ তৈরি করতে পারেনি। তাই কোনো দোকানে এই রোগের নির্দিষ্ট ওষুধ বা টিকা নেই। এর আগে দু-একটা ভায়াল (টিকা) পাওয়া গেলেও এখন তা পুরোই বন্ধ।' বিষয়টি নিশ্চিত করেন, সদর উপজেলা পশু হাসপাতালে ভেটেরিনারি সার্জন নাসরিন আকতার।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আশা কৃষক মিজানুর রহমান (৫৫) অভিযোগ করে বলেন, 'সঠিক চিকিৎসার অভাবে এ রোগে মৃতু্যর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। হাসপাতালে মিলছে না ভ্যাকসিন। এমনকি বাজারেও প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে গরু বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। লাখ টাকার গরু বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দামে।'
তিনি আরও বলেন, 'গত বছর আমার দুটি আড়িয়া গরু এই অসুখে মারা গেছে। যার মূল্য প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। এবারও গত জুন মাসে একটি বকনা গরু মারা গেছে। এর মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। বাকি গরুর ভ্যাকসিন নিতে এসে শুনি হাসপাতালে ভ্যাকসিন সাপস্নাই নাই। ডাক্তারের কাছে ভ্যাকসিনের নাম লিখে নিলাম, বাজারে পাওয়া গেলে ভালো, না পাইলে কিছুই করার নেই।'
এ ব্যাপারে ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নাসরিন আকতার বলেন, একটি উপজেলায় একজন সার্জন সেখানে কিভাবে সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব। উপজেলা প্রাণিসম্পদ পদটি শূন্য থাকায় আমাকে অফিস সামলাতে হয় আবার গরুর প্রেসক্রিপশন লিখতে হয়। ওই পদে কর্মকর্তা যোগদান না করায় কিছুটা চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এখানে যোগদান করবেন।'
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল হক জানান, এযাবৎ কত গরু আক্রান্ত হয়েছে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান বা মারা যাওয়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কৃষকের অভিযোগ শিকার করে তিনি বলেন, জেলায় প্রচুর গরু ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সরকারিভাবে টিকার বরাদ্দ নেই। তাই এর কোনো চিকিৎসা নেই। মশা ও মাছির মাধ্যমে এ রোগ বেশি ছড়ায় বলে আক্রান্ত পশুকে মশারির ভেতরে রাখার খামারি ও মালিকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ রোগ নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।'