সময়মতো ঘর ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় অবশেষে শশ্মানঘাটে আশ্রয় নিয়েছেন এক দম্পতি। মেহেরপুর সদর উপজেলার জুগিন্দা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী গাংনীর ছেউটিয়া নদীর পাশে শশ্মানঘাটে তালের পাতা আর পাটকাঠি দিয়ে ঘর তৈরি করে বসত করছেন। তবে চলমান প্রক্রিয়ায় এ দম্পতিকে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, সিরাজুল ইসলামের নেই ভিটেমাটি বা অন্য কোনো সহায়-সম্পদ। কখনো ভাংড়ির ব্যবসা আবার কখনো ফেরি করে মালামাল বিক্রি জীবিকা নির্বাহ করেন। বসত করতেন গ্রামের একজনের ভাড়া বাড়িতে। ফেরি করে যা আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ঘর ভাড়া দেওয়া ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। সময়মতো পরিশোধ করতে পারতেন না ভাড়ার টাকা। ভাড়া পরিশোধ না করায় চলতি মাসে তাদের নামিয়ে দেয় বাড়ি থেকে।
কোথাও কোনো আশ্রয় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শশ্মানঘাটের পাশে গাঁড়েন আস্তানা। আশপাশের মানুষের কাছ থেকে বাঁশ, তালের পাতা, পাটকাঠি চেয়ে নিয়ে তৈরি করেন ঝুঁপড়ি ঘর। সেখানে বসবাস করছেন তারা। স্থানীয়দের সহায়তায় চায়ের দোকান দিয়ে কোনোমতে দু'বেলা মুঠো ভাতের জোগাড়ে যুদ্ধ করছেন এই অসহায় দম্পতি।
সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি ভূমিহীন, সেই সঙ্গে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারপরও জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন স্থান থেকে বোতল কুড়িয়ে ও ভাংড়ি ব্যবসা করে কোনোমতে দু'মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতেন। স্ত্রীকে নিয়ে বসবাসের জন্য গ্রামের একজনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাড়ি ভাড়া পরিশোধ না করায় তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই বসবাসের জন্য সরকারি শশ্মানঘাট বেছে নিয়েছেন তিনি।
আশপাশের লোকজন সিরাজুল দম্পত্তিকে আপন করে নিয়েছেন। অর্থনৈতিক বিপস্নবের এই যুগে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে নানাভাবে। এর মধ্যেও সিরাজুল ইসলামের মতো অসহায় দম্পতি এখনও রয়েছেন। সরকারি কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতাই পারে এসব পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে। তাই শশ্মান ঘাটের পাশের এই সরকারি জায়গায় সিরাজুল দম্পত্তির জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার আবেদন স্থানীয়দের।
পর্যায়ক্রমে সব ভূমিহীন পরিবারই পাবে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গাসহ পাকাবাড়ি। আবেদন করে থাকলে চলমান প্রকল্পের মাধ্যমেও সিরাজুল ইসলামকে ঘর দেওয়া হবে বলে জানালেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা।