দেশের অর্থনীতির চাকা মজবুত করার প্রত্যাশায় সন্ধ্যা নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্পনগরী। অর্থনীতির দুরবস্থা দূর করার প্রত্যয়ে এই নগরী গড়ে উঠলেও দেখা মেলেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। অর্থনীতির ভিত মজবুতের মধ্য দিয়ে এই জনপদ একদিন আলোকিত হবে- এই প্রত্যাশা নিয়ে ১৯৬২ সালে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার কৌরিখাড়া নামক স্থানে স্বরূপকাঠি বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। নেছারাবাদ উপজেলার মিয়ারহাটে ২৮ দশমিক ৭৪ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এ নগরী। তবে প্রতিষ্ঠার ৬২ বছরেও সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। অর্থনীতিতে গতি আনা তো দূরের কথা ৮৬ বিঘার শিল্পনগরীজুড়ে এখন শুধুই হতাশার ছাপ। দেশের অন্য বিসিক শিল্পনগরীর থেকে নানামুখী সংকটে স্বরূপকাঠী বিসিক শিল্পনগরী আজ অনেকটাই পিছিয়ে। নির্দিষ্ট সীমানাপ্রাচীর না থাকায় বহিরাগতদের অবাধ চলাফেরার কারণে কারখানাগুলোতে প্রায়ই ঘটছে চুরি-ডাকাতি। অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টি ডেকে আনে বড় দুর্ভোগ। এমন অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা।
নথি থেকে জানা যায়, স্বরূপকাঠী বিসিক শিল্পনগরীতে বনজ শিল্প উৎপাদনে ৫০টি প্রতিষ্ঠান, পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে ২৩টি প্রতিষ্ঠান, ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও কাঁচা সিরামিক উৎপাদনে তিনটিসহ বিভিন্ন শিল্পে মোট ৯৯টি প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করছে।
বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ১৬৯ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয় স্বরূপকাঠী শিল্পনগরী থেকে। যেখান থেকে প্রতিবছর সরকার রাজস্ব আয় করে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। চারটি ক্যাটাগরির ১৬৯টি পস্নট বরাদ্দ নিয়েছে ১১০টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। যেখানে কাগজে- কলমে ৯৯টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে থাকলেও বাস্তবে খালি পড়ে আছে বেশির ভাগ পস্নট। কোনো কোনো পস্নটে কারখানার নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও বাস্তবে কোনো কার্যক্রম নেই। সংস্কারের অভাবে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয় রাস্তার ওপর। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিল্পনগরীর শ্রমিক ও মালিকরা।
তারই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক বৃদ্ধ সোহেল হোসেন (৬৮) বলেন, 'আমরা প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক এখানে কাজ করি। এখানে খাবার পানি পাওয়া যায় না, একটু পানি আনতে অনেক দূরে যেতে হয়। ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।' স্বরূপকাঠী বিসিক শিল্পনগরীর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেপারী মো. ফিরোজ বলেন, এই নগরীতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন হয়, তবে সেগুলো বিক্রির জন্য ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পরিবহণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই শিল্পনগরীর চারপাশেই নদী। নৌপথেই বিসিক থেকে পণ্য বের করতে হয়। তাই সরকার যদি বিসিক শিল্পনগরীর জন্য একটি বিশেষ ফেরি চালু করে তাহলে শুধু বিসিকের উন্নয়নই নয়, পণ্য উৎপাদন বাড়বে, বিসিক নগরী আরও সমৃদ্ধ হবে।
নেছারাবাদ বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম আসাদ বলেন, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, ভাঙা সড়ক সংস্কারসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের বিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সমস্যাগুলো দেখে গেছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ বাজেটে কাজগুলো করা হবে।