প্রকৃতির অকৃত্রিম, অনাবিল ও অফুরন্ত সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। আর বাংলার এই অবিচ্ছেদ্য সৌন্দর্যের অংশ কিশোরগঞ্জের হাওড় অধু্যষিত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীর উপজেলা হাওড়গুলো। এই জেলার সব হাওড় বর্ষাকালে আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। ভাটির দেশ কিশোরগঞ্জে রয়েছে অসংখ্য হাওড়-বাঁওড়।
কিশোরগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে পুরনো ব্রহ্মপুত্রের মেঘনা, কালনী কুশিয়ারা, ধনু, ঘোড়াউত্তা নদী। বর্ষায় দেখলে মনে হয় যেন কোনো চিত্রশিল্পীর তুলিতে প্রকৃতিকে এমনভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। কিশোরগঞ্জ হাওড় ভ্রমণ পর্যটকদের জলজ সৌন্দর্যের স্বাদ প্রাণভরে আস্বাদন করতে দেয়। মুগ্ধতার প্রধান বৈশিষ্ট্য যখন জল, তখন সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাওয়ার একমাত্র সময় হচ্ছে বর্ষাকাল।
বর্ষাকালে হাওড় অধু্যষিত উপজেলাগুলোতে চারদিকে পানির কলকল ধ্বনিতে মুখরিত সমস্ত হাওড়। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। হাওড়ের আয়নায় মেঘাচ্ছন্ন আকাশের সাজগোজ দেখার ঝোঁক কোনো ভ্রমণপিপাসু হৃদয় এড়াতে পারে না। দেশের দূরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের মন আকর্ষণ করে। হাওড়ের বর্ষার পানির মাঝখানে কিছু ছোট ছোট গ্রাম। মনে হয় যেন পানির ওপরে গ্রামগুলো ভেসে আছে। হাওড়ে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর সময় এখানকার গ্রামের বাড়িগুলো দেখতেও লাগে বেশ সুন্দর। বর্ষায় হাওড়ে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য ও মনোমুগ্ধকর করে। মনে হয় যেন এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশাল এই হাওড়।
হাওড় উপজেলাগুলোতে বর্ষাকালে যেন হাওড়ের যৌবন ফিরে পায়। অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে বসে কিশোরগঞ্জের হাওড়গুলো। সেই সৌন্দর্যের টানে হাওড়বেষ্টিত উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীতে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। উপভোগ করছেন হাওড়ের বিস্তীর্ণ জলরাশি।
অন্যদিকে আবার হাওড়ের নয়নকাড়া সৌন্দর্যের টানে ঘুরতে এসে মাঝেমধ্যে ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাও। সাঁতার না জানার পর পানিতে গোসল করতে নেমে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
হাওড়ের মাঝখান দিয়ে নির্মিত প্রায় ৩২ কিলোমিটারে সুবিশাল অলওয়েদার সড়কটিতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভিড় জমায়। প্রায় ৩২ কিলোমিটার সড়কটি দুপাশে বর্ষার পানি ঢেউ খেলে যাচ্ছে এমন মনোরম দৃশ্য যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়, বিশেষ করে পড়ন্ত বিকালে এই সড়কটির সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
হাওড়ের ঘুরতে আসা একাধিক পর্যটক জানান, দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এই হাওড়ে এসে থাকা ও খাবারের জন্য সমস্যায় পড়তে হয় তাদের।