লোকবল ও ট্রেন সংকটে ধুঁকছে চাঁদপুর রেল বিভাগ
প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম রেলপথ। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত যোগাযোগের এই মাধ্যমটি আজ নানা সংকটে জর্জরিত। প্রয়োজনীয় লোকবল ও ট্রেন সংকটে রেল বিভাগ টিকে আছে না থাকার মতো। ইতোমধ্যে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি স্টেশনে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে লূপলাইনসহ চাঁদপুর-লাকসাম রুটের ৫৭ কিলো মিটার রেলপথ পুনঃস্থাপনসহ ১১টি স্টেশন ভবন ও ছোট-বড় ৫৭টি ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় হয় ১শ' ৬ কোটি টাকা।
সেবাবঞ্চিত মানুষের দাবি, চলাচলে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে লোকবল নিয়োগের পাশাপাশি বৃদ্ধি করা হোক ট্রেনের সংখ্যা। রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা প্রদানে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন তারা। দিয়েছেন সংকট নিরসনে দ্রম্নত উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস। ব্রিটিশ শাসন আমলের শুরুর দিকে মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠে পুরানবাজার বাণিজ্য কেন্দ্র। তখন রেলপথ প্রতিষ্ঠার পর এ অঞ্চলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও বিস্তৃতি লাভ করে। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে রেলপথ। এক সময় এ অঞ্চলে ৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে চলাচল করে মাত্র দুটি ট্রেন।
মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত চাঁদপুর স্টেশন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনটিতে পরিবহণ ও বাণিজ্য বিভাগে বিভিন্ন সেক্টরে ৮০টি পদ থাকলেও নিয়োগকৃত জনবল রয়েছে মাত্র ১০ জন। বাকি ৭০টি পদেই রয়েছে জনবল সংকট। এর মধ্যে পয়েন্টস ম্যানের ১২টি পদের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৩ জন, বুকিং সহকারী পদের ৫ জনের মধ্যে রয়েছে ২ জন এবং ২ জন সহকারী স্টেশন মাস্টার থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ১ জন। এতে ব্যাহত হচ্ছে যাত্রীদের প্রত্যাশিত সেবা কার্যক্রম।
চাঁদপুর রেলওয়ের পয়েন্টস ম্যান ইয়ার সাহাবুদ্দিন বলেন, পয়েন্টস ম্যান পদ ১২টি থাকলেও আমরা মাত্র ৩ জন কাজ করছি। যেই কাজে যাকে নেওয়া দরকার তাকে যাচাই না করে নিয়োগ দেওয়ার কারণে রেল চলাচল বিঘ্ন হয়।
চাঁদপুর রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার সোয়াইবুল সিকদার বলেন, 'স্বল্প জনবল দিয়ে অনেক কষ্টকর হয়ে যায় যাত্রীসেবা নিশ্চিতে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাত্রীদের সেবা দিতে। জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে গেলে আশা করি আরও সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।'
এক সময় চাঁদপুর থেকে লাকসাম, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করত ট্রেন। যাত্রী চলাচলের পাশাপাশি পরিবহণ করা হতো ইলিশ মাছসহ নানা পণ্যদ্রব্য। এতে সরকারের কোষাগারে জমা হলো বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, পাশাপাশি চাঙ্গা ছিল এ অঞ্চলের অর্থনীতি। কিন্তু ২০০৫ সালের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ ট্রেন। ২০১৩ সালে কমিউটার ডেমো ট্রেন চালু করা হলেও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে তা চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয় ২০২১ সালে। বর্তমানে আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় লোকাল সাগরিকা নামে দুটি ট্রেন চলাচল করছে। দীর্ঘ ৩৯ বছর যাবৎ মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি জড়াজীর্ণ কোচ নিয়ে চলাচল করলেও লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। ট্রেন সংখ্যা কমে যাওয়ায় চলাচলে বিপাকে পড়ছে যাত্রী সাধারণ।
ওয়ারুক এলাকার বাসিন্দা তারেক হোসেন বলেন, আমাদের স্টেশনে নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এর কোনো সুফল ভোগ করতে পারছি না। সরকার লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে নতুন ভবন তৈরি করে ফেলে রাখায় তা নষ্ট হয়ে এখন পরিত্যাক্ত হয়ে গেছে। লোকবল না থাকায় আমরা কোনো সুফলই পাচ্ছি না।
চাঁদপুর-লাকসাম সেকশনে ৫২ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন রয়েছে মোট ১১টি। এর মধ্যে ৬টি স্টেশনে কার্যক্রম থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে মৈশাদী, শাহতলী, বলাখাল ওয়ারুক ও শাহরাস্তি স্টেশন।
কুমিলস্না রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, যেসব স্টেশন বন্ধ আছে সেগুলো হলো ডি ক্লাস স্টেশন। যেখানে ক্রসিংয়ের সুবিধা আছে সেগুলো সব চালু আছে। তবে স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। এসব স্টেশনে লোকবল নিয়োগ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে